কাহিনি বুনন, চরিত্র বিন্যাস, ক্যামেরার কাজ, সম্পাদনায় ইরানের চলচ্চিত্র অনন্য। অশ্লীলতাকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় না দিয়ে, স্রোতের অনুকূলে গা না ভাসিয়ে ইরানের চলচ্চিত্র স্বকীয়তা নিয়ে বহমান। পরিবার এবং সমাজের জটিল চরিত্র বিশ্লেষণ করে, কাউকে হিরো বা ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করে না, উপস্থাপন করে মানুষ হিসেবে। প্রচেষ্টা নেয় চরিত্রগুলোর প্রতি সহানুভূতি তৈরির। চলচ্চিত্রগুলিতে উপস্থাপনা আর বাস্তবের মধ্যে ফারাক খুব কম। ইরানি চলচ্চিত্রকাররা ছবি নির্মাণ করেন মাটিতে দাঁড়িয়ে, কল্পনায় আকাশে উড়ে নয়। কিছু চলচ্চিত্রে সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব দর্শকদের উপর ছেড়ে দেন তাদের বিচার বুদ্ধির উপর আস্থা রেখে। br আব্বাস কিয়োরোস্তামি, মজিদ মাজিদি, জাফর পানাহি, মহসিন মাফলামবাফ, আসগর ফারহাদির মতো একগুচ্ছ নির্মাতার জন্ম দিয়েছে ইরান। ২০১১ সালে বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র ক্যাটাগরিতে অস্কার জয় করেছে ‘এ সেপারেশন’। এটাই কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের প্রধান কোনো ক্যাটাগরিতে অস্কার বিজয়। br ইরানের সেন্সরবোর্ড অত্যন্ত কঠোর । সরকার এবং ধর্মবিরোধী বক্তব্য প্রচার, অশ্লীল অথবা অনৈতিক কিছু প্রদর্শনের ক্ষেত্রে শক্ত নীতিমালা আছে। নাচ-গান, চুমু খাওয়া, আলিঙ্গন তো দূরের কথা, নারীকে হিজাব ছাড়া প্রদর্শন নিষিদ্ধ।br এই কঠোর সেন্সরশিপের মধ্যেও অবিরাম কাজ করছেন ইরানের নির্মাতারা। সেন্সরের মুখোমুখি হওয়া যেন অনেকটা পাথরের মুখোমুখি হওয়া পানির প্রবাহের মতো। এ প্রবাহ আটকে রাখা যায় না। পানি সব সময়ই বিকল্প পথ খুঁজে বের করে ধাবমান হয়। শিল্পকেও সেরকম সেন্সরশিপ দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা যায় না।br ইরানের একাধিক পরিচালক জেল জুলুম নিষোধাজ্ঞার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের কোনো সৃষ্টিকে আটকে রাখতে পারেনি সেন্সরশিপ। তাঁরা বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছেন। বাংলাদেশের মাটিতেও সুটিং হয়েছে ইরানি চলচ্চিত্রের। আর এসব বয়ান নিয়েই রচিত হয়েছে ‘চলচ্চিত্রের বিস্ময়কর দুনিয়া ইরান’।