অনুরূপা মানব চরিত্র বড়ই বিচিত্র। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই হয়তো একটা অন্য মানুষ লুকিয়ে আছে, যা সবসময় আমাদের চোখে পড়ে না। অনুরূপার জীবনেও এমন কিছু মানুষ এসেছিল যাদের বাইরে থেকে যেমনটা মনে হয়েছিল ভেতরটা তার বিপরীত। অনুর পরিবার সচ্ছল হলেও ভালোবাসাগুলো ছিল খুব ক্ষণস্থায়ী। রানাঘাটে অনুর আদিবাড়ি হলেও কলকাতাতেও তাদের একটা আদিবাড়ি আছে। তবে ওর জন্ম রানাঘাটেই আর জন্মের পর থেকেই শুরু হয় অনুর লড়াই। জন্মের পরই অনুর বাবা ডাক্তারকে জিজ্ঞেসা করলেন- “কী গো ডাক্তার, কী হল, ছেলে না মেয়ে?” ডাক্তার যখন জানাল তার একটি ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে তখন অনুর বাবা বলে উঠলেন- “মেয়ে হয়েছে! এক কাজ করো কিছুটা লবণ খাইয়ে মেরে দাও।” না সেদিন অনু মরেনি, মাতৃস্নেহ তাকে মরতে দেয়নি। এভাবেই অনেক ভাই-বোনের মাঝে অবহেলায় বড়ো হচ্ছিল অনু। হঠাৎ একদিন বাবার সামনে আদো আদো ভাষায় এসে বলে উঠল- “বাবা আমায় কোলে নেবে!” সেদিন বাবা রমেনবাবু মেয়ের এই বাবা ডাকটা শুনে মেয়ের দিকে তাকিয়ে তাকে কোলে তুলে নিয়ে বললেন- “আমায় ক্ষমা করে দিস মা, আমি তো আগে বুঝিনি তোর মুখে বাবা ডাকটা শুনে মনে এতটা শান্তি অনুভব করব। কিন্তু ওই যে সুখী আদুরে জীবন ঈশ্বর হয়তো সকলের কপালে লেখেননি। তেমনই অনুর ও বেশিদিন বাবার স্নেহ-ভালোবাসা পাওয়া হলো না। মাত্র পাঁচবছর বয়সে অনুর বাবা আকাশে তারাদের দেশে চলে গেলেন, দেখতে দেখতে অনুও বড়ো হতে লাগল ।