আশির করালকালে অনেকের জীবনেই আর সকাল আসেনি। আর আমরা যারা কোন না কোনভাবে সন্ধ্যাতীরে ভিড়েছিলাম তাদের সুযোগ হয়নি ইয়েট্স-এর মত জোনাকির গান শোনা। প্রবল থেকে প্রবলতর হয় অস্থিরতা-অস্তিত্ব কাঁপিয়ে দেয় বৈরী পরিপার্শ্ব। পুঁজির লকলকে জিড ধাতব খড়গ হয়ে ঝোলে। তারুণ্য তখন যেন অভিশাপ, যৌবন তখন ঝুঁকির সর্বনাম। এমন অজাচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্যে লাগে সাহস, ক্ষিপ্রতা আর সৃজনোন্মাদনা। কাব্যচর্চা বাধ্য হয় পথ ঘোরাতে, স্বভাব বদলাতে তার চোখে নতুনতরের স্বপ্ন। অস্তিত্বেও অহংকারী ঘোষণার প্রকাশ ঘটলো নামে ছোট কিন্তু ব্যঞ্জনায় গভীর কাগজে। স্বদেশ-স্বসমাজ-স্বঐতিহ্যকে মোহমুক্ত দৃষ্টিতে পরখ করবার প্রণোদন হলো বিশ্বায়নের দুর্মর পরিব্যাপ্তির স্রোতে আত্মচেতনতার প্রত্যয়ে। স্বল্প কথার এই সাক্ষ্য হয়তো এক অনিবার্য গৌরচন্দ্রিকা । কবি এজাজ ইউসুফী এবং প্রায় অঙ্গাঙ্গীভাবে তাঁর 'লিরিক এর জন্যে নিশ্চয়ই আরও বাড়তি কথার প্রয়োজন। কিন্তু এখন পেছন ফিরে দেখলে, তাঁর সেই প্রথম মুদ্রণের স্বপ্নাদ্য মাদুলি কাব্য গ্রন্থটিতে এক স্বপ্নপ্রবণ সৃজনোন্মাদ তারুণ্যখচিত কবির উপস্থিতিকেই লক্ষ করি। নানা বিষয়ের স্রোতে তাঁর ভাসানো গন্ডোলা বয়ে চলেছে আজও। এখনও তিনি 'জীবনের গান'-ই গেয়ে চলেছেন 'রোদে সেঁকে'। প্রায় সিকি শতাব্দীকাল আগে তাঁর চোখে পড়ে ‘হিমোগ্লোবিনের কণা’-হারানো কৃষকদের। সেই কৃষকদের উত্তর পুরুষেরা সকলেই আজ আর কৃষক নেই কিন্তু তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই রক্তে হিমোগ্লোবিন দুই অংকের নিচে। প্রায় চার দশক আগে শুরু হয়েছিল তাঁর পথ হাঁটা, কবিতায় যেটি ছিল এক 'স্বপ্ন বপনের দিন'-তখনও এবং আজও সেখানে বর্তমান 'কলোনিয়াল ইন্টারভিন' ভিন্নমাত্রিকতায় অবশ্য। আফ্রিকিয় চিনুয়া এ্যাচেৰে ঔপনিবেশিকতার জাল ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন ওকোঙ্কোর ড্রাম আর কোরাসের তালে। এশীয় এজাজের প্রত্যয় শেকড়ের শক্তি সঞ্চয়- “মানুষ মানুষ করে এই হাতে নিয়েছি বন্দুক / ভাঙবো প্রতিটি তালা লুটে নেবো স্পর্ধিত সিন্দুক। " নেতির বিস্তীর্ণ বেলাভূমিতে কাব্যিকতার এমন কণ্ঠ পূর্ণত চকমকি-সদৃশ। আমরা সেই দুর্লভ দৃশ্য-চিত্রেরই প্রত্যাশী। . মহীবুল আজিজ বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অক্টোবর ২০১১