পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রাম image

পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রাম (হার্ডকভার)

by ড. মোঃ সবুর খান

Total: TK. 300

পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রাম

পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রাম (হার্ডকভার)

book-icon

বই হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধের সুযোগ

mponey-icon

৭ দিনের মধ্যে পরিবর্তনের সুযোগ

Customers Also Bought

Product Specification & Summary

ভূমিকা ২০২১—২২ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ প্রায় ৪৬০.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ১৯৭২ সালে ছিল মাত্র ৬.২৯ বিলিয়ন ডলার। সেই একই ধারাতে ১৯৭২ সালের ৯৪ মার্কিন ডলারের মাথাপিছু আয় বাড়তে বাড়তে এখন তা এসে দাঁড়িয়েছে ২,৮২৪ মার্কিন ডলারে। মুদ্রাস্ফীতিকে কঠোরভাবে ও সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে হিসাবে নিয়েও বলা যায় যে, এ বৃদ্ধি অসাধারণ! এই সূত্রে আরেকটু পেছনের দিকে তাকালে দৃশ্যটি তখন আরো অধিক বিস্ময়কর বলেই মনে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের বা অব্যবহিত পরবর্তী সময়ের অবস্থার দিকে তাকিয়ে বর্তমান সময়ের তুলনা টানতে গেলে অনিবার্যভাবেই এটিকে এক অসাধারণ অর্জন বলে গণ্য করতে হবে এবং নিঃসন্দেহে এটি এ দেশের কোটি কোটি মেধাবী ও পরিশ্রমী মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টারই ফসল। তবে মানতেই হবে যে, এরমধ্যেও আবার কতিপয় মানুষের নেতৃত্ব এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে, যাদের কথা আলাদাভাবে স্মরণ ও আলোচনা করাটা খুবই জরুরি। আর সে আলোচনা শুধু ব্যক্তি বিশেষের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য নয়—— রাষ্ট্র ও সমাজের ভবিষ্যৎ নীতি—পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সম্ভাব্য পথধারা নির্মাণের জন্য অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবার তাগিদ ও প্রয়োজন থেকেও তা জরুরি। আর শেষোক্ত এ বোধ থেকেই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) পক্ষ থেকে স¤প্রতি ১৯৪৭—পূর্ব সময়ে জন্মগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রামকে লিপিবদ্ধকরণ ও গ্রন্থাকারে প্রকাশের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এবং সে উদ্যোগেরই ফসল পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রাম শীর্ষক এ গ্রন্থ। গবেষণামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট পরীক্ষা—নিরীক্ষা ও যাচাই—বাছাইয়ের পর এ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪ জন উদ্যোক্তার জীবনবৃত্তান্ত প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁদের মধ্যকার দু'জনের সম্মানিত উত্তরসূরীদের ব্যস্ততাজনিত কারণে ঐ দু'জনকে বাদ রেখেই অবশিষ্ট ১২ জনকে নিয়ে এ গ্রন্থ প্রকাশের কাজ সম্পনড়ব করতে হলো। তবে আমরা আশাবাদী যে, এ গ্রন্থের পরবর্তী সংস্করণ প্রকাশের সময় উলিখিত দু'জন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের জীবনসংগ্রামের কথাও অবশ্যই সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। যে ১২ জন পথদ্রষ্টা সংগ্রামী মানুষের জীবন ও জীবনসংগ্রামের বৃত্তান্ত নিয়ে এ গ্রন্থ প্রকাশিত হলো, তা বস্তুত ঐ ব্যক্তিবর্গের সম্মানিত উত্তরসূরীদের সহযোগিতারই ফসল। তাঁদের পরম মমতাপূর্ণ সহযোগিতা ব্যতিরেকে এ গ্রন্থটি কিছুতেই প্রকাশ করা সম্ভব হতো না। আর সে জন্য তাঁদের প্রত্যেকের কাছে আমরা গভীরভাবে ঋণী এবং তাঁদের এরূপ মমতাপূর্ণ সহযোগিতার জন্য তাঁদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তবে এ ক্ষেত্রেও বলা প্রয়োজন যে, এ গ্রন্থে উলিখিত ব্যক্তিবর্গের জীবনসংগ্রামের যতটুকু তুলে ধরা হয়েছে, তা তাঁদের সমগ্র জীবন, কর্ম ও অবদানের বিপরীতে খুবই সামান্য অংশ মাত্র। ফলে এটিও আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে যে, এ গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশের সময় তাঁদের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তুলে ধরা হবে এবং এ ব্যাপারে এখনকার মতো তখনও আমরা এ গ্রন্থের লেখকদের কাছ থেকে অনুরূপ সহযোগিতা পাবো বলে আশা রাখি।এ গ্রন্থে কাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে তা বাছাইয়ের লক্ষ্যে গবেষণা চালাতে যেয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি নির্মাণে রাষ্টে্রর ভূমিকার পাশাপাশি ব্যক্তির ভূমিকাকে আপাতদৃষ্টে যতটুকু বিস্তৃত বলে মনে করা হয়, সে তুলনায় তাঁদের প্রকৃত অবদান আরো অনেক বেশি। গত অর্ধ শতাব্দীর ব্যবধানে বাংলাদেশের কৃষিখাতে যে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তার পেছনে রাষ্টে্রর ভূমিকার চেয়েও অনেক বেশি ও বিস্তৃততর বদান রয়েছে এ দেশের সৃজনশীল, মেধাবী ও পরিশ্রমী কৃষকের। একইভাবে জিডিপিতে উৎপাদনশীল (ম্যানুফ্যাকচারিং) শিল্পের অবদানের হার ১৯৭২ সালের ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে—যে ২৩.৫৯ শতাংশে (২০০৫—০৬—কে ভিত্তিবছর ধরে ২০২১—২২ অর্থবছরের হিসাব) পৌঁছেছে, তার পেছনেও রাষ্টে্রর তুলনায় ব্যক্তি—উদ্যোক্তাদের অবদানই অধিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে (ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী, কর—শুল্ক ফাঁকিদানকারী প্রভৃতি অসৎ উদ্যোক্তাদেরকে বাইরে রেখেই এ হিসাব)। কিন্তু ভিনড়ব খাতে কৃষক, শিল্পোদ্যোক্তা ও অন্যান্য ব্যক্তিমানুষের এরূপ বিশাল অবদানের বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সামনে ওঠে আসেনি——রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত প্রণেতারাই বরং এর সিংহভাগ কৃতিত্ব দাবি করার চেষ্টা করেছেন। আর যেটুকু বা যাদের বিষয়গুলো ওঠে এসেছে, তারা আসলে এ ক্ষেত্রের প্রতিনিধি স্থানীয় ব্যক্তি নন। ফলে মানতেই হবে যে, প্রকৃত অবদান যোগকারী ব্যক্তিরা অধিকাংশ সময়ে অনেকটা আড়ালেই থেকে গেছেন। এ গ্রন্থ প্রকাশের একাধিক উদ্দেশ্যের মধ্যকার একটি উদ্দেশ্য এটিও যে, এর মধ্য দিয়ে ওইসব মানুষদের অবদানের যে বিশাল অংশ আড়ালে থেকে গেছে, তা যেন আগামীদিনে সামনে ওঠে আসতে পারে, যা দেখে এ দেশের নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তারা উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হবেন। এ গ্রন্থে যে ১২টি প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে ১১টি হচ্ছে ১১ জন বরেণ্য ব্যক্তির উপর। বাকি প্রবন্ধটি একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানের উপর, যেখানে একাধিক ব্যক্তি অনন্য কর্মকৌশল, অভিনড়ব চিন্তাধারা ও অনুকরণীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একত্রে বিলীন হয়ে গেছেন। আর প্রতিষ্ঠানটি হলো ইস্পাহানি গ্রুপ। ইরানের ইস্পাহান থেকে ভারতের বোম্বাইতে এসে হাজী মোহাম্মদ হাশেম ১৮২০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে কলকাতা হয়ে ১৯৪৭ সালে চট্টগ্রামে এসে বাংলাদেশের মাটিতে স্থিত হয়। শুরু থেকে এর বর্তমান চেয়ারম্যান মীর্জা সালমান ইস্পাহানি পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের উলেখযোগ্য অন্যান্য উদ্যোক্তা—ব্যক্তিত্বরা হলেন মীর্জা মেহেদী ইস্পাহানি, মীর্জা মোহাম্মদ ইস্পাহানি, মীর্জা আহমেদ ইস্পাহানি, মীর্জা মেহেদি ইস্পাহানি, মীর্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানি প্রমুখ। ইস্পাহানি গ্রুপের ইতিহাস ও অবদানের বর্ণনায় ওই ব্যক্তিদেরকে কোনোভাবেই পরস্পর থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। আর সে কারণেই এ সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধটির বিষয়বস্তু হিসেবে ব্যক্তির পরিবর্তে পুরো পরিবারটিকেই তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, যে পারিবারিক ঐক্যের কারণে এ প্রতিষ্ঠানের একজনকে আরেকজন থেকে আলাদা করা সম্ভব হয়নি, বস্তুত সেই ঐক্যই হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানের মূল শক্তি। প্রসঙ্গত উলেখ্য, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে নানা জনহিতকর প্রতিষ্ঠান স্থাপনেও ইস্পাহানি গ্রুপের ব্যাপক অবদান রয়েছে। আমরা ইস্পাহানি গ্রুপের শেষহীন পথচলা কামনা করছি। এ কে খান গ্রুপকে মানুষ সবচেয়ে প্রমে চেনে এ পরিচয়ে যে, সম্পদ—বিশালতার কারণে ১৯৪৭—পূর্ব সময়ে এটি ছিল সমগ্র পাকিস্তানের সিংহভাগ সম্পদের মালিকানাধারী ২২ পরিবারের একটি। কিন্তু সে সম্পদ—বিশালতার বিপরীতে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তযুদ্ধ এবং দেশের অর্থনৈতিক উনড়বয়নে তাদের যে বিশাল অবদান, সে বিষয়টি জনসমক্ষে খুব একটা ওঠে আসেনি। এ গ্রন্থের মধ্য দিয়ে এ কে খানের জীবনের সেসব অননুন্মোচিত অবদানের অনেকখানিই জনগোচরে আসবে বলে আশা করা যায়। একইসঙ্গে সামাজিক অর্থনীতির উনড়বয়নে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, সেটিও বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, তিনি ছিলেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্পমন্ত্রী এবং সে দায়িত্বের আওতাতেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উনড়বয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ও দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছিলেন। রহিমআফরোজের প্রতিষ্ঠাতা এ সি আবদুর রহিমের ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনী কর্তৃক স্থাপিত গ্যাসলাইনের ব্যবহার—অতিরিক্ত অবকাঠামো সরঞ্জামদি কিনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে, যা তিনি কিনেছিলেন এলেন বেরি অ্যান্ড কোম্পানির কাছ থেকে। কম বয়সী একজন তরুণ উদ্যোক্তার জন্য এটি ছিল একটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কিন্তু আবদুর রহিম তাঁর জীবনের প্রম থেকে শেষ পর্যন্ত বরাবর এরূপ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যতিক্রমী ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সাথেই নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিনি ব্যবসা করেছেন বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানির সাথে। তাতে তাঁর ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে বরাবরই এক ধরনের আন্তর্জাতিকতা বোধ কাজ করেছে, যা আজকের এ বিশ্বায়নের যুগে আরো অধিক প্রাসঙ্গিক। ফলে আমরা যখন এ তাগিদের কথা বলি যে, আমাদের শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো অধিক মাত্রায় বৈশ্বিক হয়ে ওঠতে হবে, তখন প্রাকারান্তরে আমরা নিজেদের অজান্তে এ সি আবদুর রহিমের মতো মানুষদেরকেই ধারণ করি। আর বস্তুত এখানেই নিহিত রয়েছে রহিমআফরোজের অনন্য সাফল্য ও অবদানের গল্প। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে নতুন ওষুধনীতি প্রণীত হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে ওষুধের উৎপাদন ছিল মূলত বহুজাতিক কোম্পানি—নির্ভর। কিন্তু স্যামসন এইচ চৌধুরী ও তাঁর কতিপয় সহকর্মী মিলে দীর্ঘদিনের সে বহুজাতিক কোম্পানি—নির্ভরতাকেই শুধু অপসারিত করেননি—— বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম ওষুধ রপ্তানিকারক দেশের মর্যাদায় উনড়বীত হওয়ার পথও নির্মাণ করে দিয়েছেন। তাঁরই মেধাবী চিন্তায় ও নিপুণ হাতের স্পর্শে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসহ এ গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন গুণগত মান বিবেচনায় পৃথিবীর যেকোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনীয়। ওষুধ শিল্পের জন্য সরকার যে এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্টস) শিল্পপার্ক স্থাপন করেছে, রেকর্ডভিত্তিক তথ্য হচ্ছে যে, সেটির মূল রূপকারও ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। আর সেখানে অত্যাধুনিক কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধন প্যান্ট (সিইটিপি) স্থাপনের ধারণাটিও তাঁর অগ্রসর চিন্তারই ফসল। আর ওষুধের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প স্থাপনে উদ্যোগি হওয়ার অভিঞ্জতাই তাকে বেশি সাহায্য করেছে। প্রায় পর্দকহীন শূন্য জীবন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন শেখ আকিজ উদ্দিন। তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও ছিল না। কিন্তু উচ্চমেধা, অদম্য সাহস ও ধৈয্যর্, সততা এবং উদ্ভাবনাময় চিন্তাভাবনার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব কোনোদিনও তাঁর কর্মজীবনকে এতটুকু স্পর্শ করতে পারেনি। বরং এমন কর্মময় জীবন তিনি গড়ে তুলেছিলেন, যা এখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষের পঠনপাঠনের বিষয়। উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী শিক্ষিত তরুণেরা যারা পুঁজির অভাবকে ব্যবসায় শুরুর অন্তরায় বলে মনে করেন, তারা অনায়াসে শেখ আকিজ উদ্দিনের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। তাঁর জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা নানা কর্মদৃষ্টান্ত বহুদিন পর্যন্ত এ দেশের উদ্যোক্তা উনড়বয়ন সংক্রান্ত আলোচনার পরিধিতে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হয়ে থাকবে। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে আরো ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা হওয়া উচিৎ বলে মনে করি। আমাদের জানামতে, সীমিত পরিসরে হলেও সে উদ্যোগ ইতোমধ্যে কিছুটা হলেও গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৬০—এর দশকের গোড়াতে বাঙালি মধ্যবিত্ত জীবনে ঠাণ্ডা পানীয় বলতে বুঝাতো মূলত কমলালেবুর রস ও চিনি মেশানো শরবত। আর আইসক্রিম বলতে বুঝাতো মূলত কাঠের বাক্সে ভরা বাঁশের পাতলা শলাকার উপর স্যাকারিন মেশানো বরফের টুকরা। তো, সে রকম একটি খাদ্যাভ্যাস ব্যবস্থাধীন সমাজে হঠাৎ করেই প্রায় কাছাকাছি সময়ে ১৯৬২ ও ১৯৬৪ সালে বাজারে এলো কোকাকোলা ও ইগলু আইসক্রিম। এ তখন অনেকটা রূপকথার গল্পের মতো, যার নির্মাতা ছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের অন্যতম করপোরেট প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আবদুল মোনেম। তা, ভোক্তার চাহিদা, রুচি ও প্রয়োজনকে এভাবে দূরদৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করতে পারার কারণেই আবদুল মোনেম লিমিটেড আজ এক অনুকরণীয় বরেণ্য প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মোনেম আজ ক্ষণে ক্ষণে আলোচিত এক অনন্য বক্তিত্ব। বাংলাদেশের প্রধান রফতানিপণ্য এখন তৈরি পোশাক। কিন্তু ১৯৭৪ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে এটি চিন্তারও অগম্য ছিল যে, পোশাক সেলাই করে তা বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। আর সেই অচিন্তনীয় বিষয়টিকেই মোহাম্মদ নুরুল কাদের এমন এক অর্থনৈতিক খাতে রূপ দিলেন যেখানে প্রায় ৪ লাখ দরিদ্র মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি হলো, যার মধ্যে আবার ৩ লাখই নারী। তাঁর এ অবদানের জন্য স্বভাবতই তাঁকে স্মরণ করা হয় বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের পথিকৃৎ হিসেবে। কিন্তু এ পুস্তক সূত্রের গবেষণা বলছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বছরে প্রায় ৩৫.৩৬ বিলিয়ন ডলার আয় করার চেয়েও এ ক্ষেত্রে অধিকতর বড় ঘটনা হচ্ছে , এ খাতে কর্মরত ঐ ৩ লাখ দরিদ্র নারী বাংলাদেশের পরিবারের ভেতরকার ক্ষমতাকাঠামোটিকেই আমূল পাল্টে দিয়েছে। এই নারীদের অধিকাংশই হয়তো মোহাম্মদ নুরুল কাদেরের নাম জানেন না। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থ—সামাজিক রূপান্তরের ইতিহাসে তিনি যে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন, তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। বহুজাতিক কোম্পানির উচ্চতর স্তরের নির্বাহী থেকে পরে শিল্পোদ্যাক্তা হয়েছিলেন আনিস উদ দৌলা। বাংলাদেশের বিভিনড়ব সরকারি—বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানির কর্ম—অভিজ্ঞতা সম্পনড়ব এমন বহু ব্যক্তিই এ দেশে রয়েছেন, যারা অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আনিস উদ দৌলার এ পথ অনুসরণ করতে সাহসী হননি। কিন্তু এটি করতে পারলে একদিকে দেশের ব্যবসায় ও উৎপাদনখাত যেমন উপকৃত হতো, অন্যদিকে তেমনি দক্ষ ও অভিজ্ঞ নির্বাহীদের মধ্য থেকে দেশে নতুন উদ্যোক্তা গড়ে ওঠার সংস্কৃতিও বেগবান হতে পারতো। আমরা আশা করবো, এ যুগের নির্বাহীরা আনিস উদ দৌলার পথ অনুসরণে সাহসী ও উদ্যোগী হবেন। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, ব্যবসার ধরন, সেবা বা উৎপাদন যাইহোক না কেন, সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করে চলার বিষয়ে আনিস উদদৌলার যে নীতিবোধ, সেটাই এসিআইকে বাংলাদেশের প্রম আইএসও সনদদারী প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা অর্জনে সাহায্য করেছে; এবং এ থেকে তাঁর উদ্যোক্তা—চরিত্রের ধরনটিকেও অনেকাংশে বুঝা যায়। সবকাজে নিখুত হওয়ার ব্যাপারে আনিস উদ দৌলার যে আগ্রহ, সেটা তার উদ্যোক্তা—সত্বরই বহিঃপ্রকাশ নয়—তাঁর ব্যক্তি—মননেরও পরিচায়ক। সামরিকবাহিনীর শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনের প্রভাব ছিল মেজর জেনারেল (অবঃ) আমজাদ খান চৌধুরীর ব্যবসায়িক জীবনেও। সামরিকবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত জীবনের মধ্যে থেকেও কৃষক ও কৃষি তথা গ্রামবাংলার প্রতি তাঁর যে মমতা গড়ে ওঠেছিল, বস্তুত সে মমতার কারণেই তাঁর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রও হয়ে ওঠেছিল কৃষিভিত্তিক কর্মকাণ্ড। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে বিবেচনায় রেখেই বস্তুত তাঁর হাতে গড়ে ওঠা প্রাণ—আরএফএলের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড। এদিকে সমীক্ষার তথ্য বলছে যে, গ্রামভিত্তিক মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনকে বিবেচনায় রেখে প্রাণ—আরএফএলের উৎপাদিত পণ্যের অনুরূপ পণ্য এখন বাংলাদেশে আরো ব্যাপক পরিসরে উৎপাদনের সুযোগ ও প্রয়োজন দুই—ই রয়েছে। আর সে সুযোগকে কাজে লাগাতে আগ্রহী নতুন উদ্যোক্তারা বহুলাংশেই আমজাদ খান চৌধুরীর চিন্তার ধারস্থ হতে পারেন বলে মনে করি। অন্যদিকে ক্রেতা ও ভোক্তার সাথে সময় ও আনুষঙ্গিক অঙ্গীকার রক্ষার যে চচ্চর্া তিনি আমৃত্যু করে গেছেন, তা থেকেও এ দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য অনেককিছু শেখার আছে। তবে সবচেয়ে বেশি শেখার আছে এটি যে, গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণে প্রাণ—আরএফএলের মতো নিবেদিত হতে পারলে এ রকম প্রতিষ্ঠান এ দেশে আরো গড়ে তোলা সম্ভব। অতি অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে আনোয়ার হোসেন শুধু অভিভাবকত্ব হারাবার সমস্যাতেই পড়েননি, ব্যবসায়িক কাজের জন্য বাবার নিয়োজিত কর্মচারীর কাছ থেকে বিশ্বাসঘাতকতারও শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে। তারপরও তিনি এতটুকু দমে যাননি; বরং ঐ পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতাই তাঁকে আরো বেশি মাত্রায় ধৈয্যর্শীল, সাহসী ও সংগ্রামী হয়ে ওঠতে অনুপ্রাণিত করেছিল। আর ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আত্মদক্ষতা উনড়বয়নের জন্য তাঁর ছিল এক নিজস্ব দর্শন। কোনো একটি শিল্পে হাত দেয়ার আগে প্রমে তিনি এর বেচাকানার সাথে যুক্ত হতেন এবং সেখান থেকে অর্জিত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরে সেটির উৎপাদনে যেতেন। তাঁর এ কৌশলকে শুধু অসাধারণ বললেই যথেষ্ট বলা হয় না; বরং বলা দরকার যে, যেকোনো দূরদর্শী উদ্যোক্তারই উচিৎ ব্যবসায় শুরু করার আগে এভাবে নিজেকে গড়ে তোলা, যা তার ব্যবসায় ও শিল্পকে টেকসই ভিত্তির উপর দাঁড়াতে সাহায্য করবে। ব্যবসায়িক সম্ভবনা খুঁজে বের করার জন্য সারাদেশের আনাচেকানাচে ঘুরে বেরাবার যে অদম্য মনোবৃত্তি তিনি লালন করতেন, তা থেকেও নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তারা শিক্ষা ও ধারণা নিতে পারেন বলে মনে করি। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ও অসন্তোষ ছিল পরিবারের ভেতর থেকে। পরিবারের সদস্যদের প্রায় কেউই চাননি পারিবারিক আবহের বাইরে যেয়ে তিনি উদ্যোক্তাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বহুজাতিক কোম্পানির আয়েশী চাকরি ছেড়ে তিনি প্রতিকূলতাসঙ্কুল চ্যলেঞ্জপূর্ণ ব্যবসাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এ কাজটি আমাদের শিক্ষিত তরুণেরা করতে পারলে বাংলাদেশে ব্যবসায়ের নৈতিক ও গুণগত মান অনেকখানি এগিয়ে যেতে পারে বলে মনে করি। আর এপেক্সকে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী কর্মকৌশলের উপর আশ্রয় করে। বাংলাদেশের অধিকাংশ উৎপাদক যেখানে স্থানীয় বাজার দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন এবং পরে রপ্তানির দিকে এগোন, সেখানে এপেক্স ব্যবসা শুরু করেছে রপ্তানি বাজার দিয়ে এবং পরে তারা স্থানীয় বাজারের সাথে যুক্ত হয়েছে। এটি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সাহস ও দূরদৃষ্টিরই প্রতিফলক, যা আমাদের নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তারদেরকে সাহস যোগাতে ও পথ দেখাতে পারে। তাঁর মতো প্রাঞ্জল ও প্রখর মেধাসম্পনড়ব ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের ব্যবসায় ও শিল্পখাতের জন্য এক বড় ধরনের সম্পদ বৈকি! প্রচলিত ধারার মূল্যায়নে লতিফুর রহমানকে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তা চিহ্নিত করার যে রীতি চালু আছে, সেটি তাঁর উদ্যোক্তা সত্ত্বাকে বুঝার জন্য খুবই অপর্যাপ্ত। বাংলাদেশের অধিকাংশ বড় প্রতিষ্ঠানের কোনটির মালিক কে, তা দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষই জানে। কিন্তু লতিফুর রহমানের মালিকানাধীন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই জনপ্রিয় ও মর্যাদার দিক থেকে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও এগুলোর মালিক কে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ তা জানে না। নিজেকে আড়ালে রেখে কাজকে সামনে নিয়ে আসার এমন অনন্য দৃষ্টান্ত শুধু বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে কেন, পৃথিবীর অনত্রও খুব সাধারণ ঘটনা নয়। লতিফুর রহমান তাঁর কর্মীদের উপর অগাধ আস্থা রাখতেন এবং তাঁদের কাজ ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি মনে করতেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কর্মীই একেকজন উদ্যোক্তা। আর ট্রান্সকমের আওতাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেই তিনি গড়ে তুলতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক মান ও আদলে। আর মুনাফা বৃদ্ধির লোভে সরকারকে প্রদেয় রাজস্ব ফাঁকিদানের চিন্তা তাঁর মাথায় কখনোই সেনি। এটি অবশ্য এ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য উদ্যোক্তদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। আর মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন বলেই নিজের মালিকানাধীন পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিতে কখনোই তিনি হস্তক্ষেপ করেননি এ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি সমন্বয় ও সম্পাদনার কাজ করতে যেয়ে আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, বাংলাদেশের উদ্যোক্তা উনড়বয়ন কার্যক্রমকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনার আওতায় এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এর ইতিহাস, প্রবণতা ও বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিক বৈশ্বিক গতিধারা নিয়ে আরো ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। আর এ গ্রন্থের কাজ করতে যেয়ে সৃষ্ট সে উপলব্দি থেকেই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে একটি উদ্যোক্তা উনড়বয়ন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনা আমাদের রয়েছে। আর তা করা সম্ভব হলে উক্ত গবেষণা কেন্দ্রের আওতায় উদ্যাক্তা উনড়বয়ন সংক্রান্ত আরো বহুসংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। উদ্যোক্তা উনড়বয়ন সংক্রান্ত সহায়ক কার্যক্রমের মানগত স্তরের বৈশ্বিক ক্রমে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো যথেষ্ট নিচে, বলা চলে খুবই নাজুক। দেশ বর্তমানে যে উচ্চতর প্রবৃদ্ধির ধারায় রয়েছে, সে ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত সহায়ক কার্যক্রম যথেষ্ট দক্ষ ও গতিশীল হলে প্রবৃদ্ধির সে ধারা আরো উচ্চতর হতে পারতো। এ অবস্থায় উল্লিখিত শূন্যতা পূরণে পূর্বসূরী উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রামের বৃত্তান্ত থেকে সাহায্য নিয়ে সামনে এগুনো যায় কিনা, অনেকটা সে চিন্তা থেকেই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষ হতে পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রাম গ্রন্থটি প্রকাশের উদ্যোগ। এ গ্রন্থ যদি সে শূন্যতা পূরণে সামান্যও কোনো অবদান রাখতে পারে, তাহলে আমাদের এ প্রয়াস খানিকটা হলেও কাজে আসলো বলে মনে করবো। এ গ্রন্থের ব্যাপারে যেকোনো গঠনমূলক পরামর্শকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। জানুয়ারি ২০২৩ ড. মোঃ সবুর খান
Title পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রাম
Editor
Publisher
ISBN 978-984-35-4299-1
Edition 1st Published, 2023
Number of Pages 112
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

Similar Category Best Selling Books

Related Products

Sponsored Products Related To This Item

Reviews and Ratings

sort icon

Product Q/A

Have a question regarding the product? Ask Us

Show more Question(s)
prize book-reading point

Recently Sold Products

Recently Viewed
cash

Cash on delivery

Pay cash at your doorstep

service

Delivery

All over Bangladesh

return

Happy return

7 days return facility

0 Item(s)

Subtotal:

Customers Also Bought

Are you sure to remove this from book shelf?

পথিকৃৎ উদ্যোক্তাদের জীবনসংগ্রাম