"সাগরের যত খেলনা"বইটির প্রথমের কিছু কথা: সাগরের বয়স সাত বছর এগারাে মাস একুশ দিন। সে পড়ে ক্লাস টু’তে, তাই সে । নিজে নিজেই হিসাব করে বলে দিতে পারে যে আর মাত্র নয় দিন পরে তার জন্মদিন। ব্যাপারটা চিন্তা করেই আনন্দে তার বুকের ভিতর কেমন জানি করতে থাকে। আগে যখন সে ছােট ছিল তখন সারা বছর সে দুশ্চিন্তায় থাকত—যদি তার আব্দু-আম্মু জন্মদিনের কথা ভুলে যান তখন কী হবে? এখন অবশ্যি সাগর বড় হয়েছে, সে জানে তার আব্দু-আম্মু কখনােই তার জন্মদিনের কথা ভুলে যাবেন না। যেদিন তার জন্মদিন সেদিন তার সব মামা-খালারা আসেন, তার চাচা-ফুপুরা আসেন, তার মামাতােখালাতাে ভাই বােনেরা আসে, তার চাচাতাে-ফুপাতাে ভাই বােনেরা আসে, তার স্কুলের বন্ধু-বান্ধবরা আসে, তারপর সবাই মিলে যা একটা কাণ্ড হয় সে আর বলার মতাে নয়। এত মজার একটা ব্যাপার তার আব্দু-আম্মু ভুলে যাবেন সেটা তাে হতে পারে না। এবারেও জন্মদিনের ঠিক দশদিন আগে খাবার টেবিলে আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, “সােনামণি সাগর বাবু, এবারে জন্মদিনে তােমার কী চাই?” সাগরের তখন একটু একটু লজ্জা করে, সে এত বড় হয়েছে, একা একা ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যায় আর তার আম্মু কী না তাকে সােনামণি ডাকছেন! সােনামণি তাে ডাকে ছােট ছােট বাচ্চাদের। সাগরের আবার ভালও লাগে, জন্মদিনে কী চাই চিন্তা করতে কার না ভাল লাগে? সাগর অবশ্যি সাথে সাথে কিছু বলে না, প্রথমে মুখটা উদাস উদাস করে বলে, “কিছু লাগবে না আমার।” আম্মু তখন মুখে দুশ্চিন্তার ভাব করে বলেন, “কিছু লাগবে না কেন? সােনামণি কী। রাগ করেছে নাকি?” সাগর তখন মাথা নেড়ে বলে, “না, আম্মু আমি রাগ করি নি।” আলু তখন চোখ মটকে বলেন, “তাহলে কেন তােমার কিছু লাগবে না?” সাগর তখন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “ঠিক আছে, তাহলে আমাকে একটা রােলার স্কেট কিনে দিও।” | আব্ব তখন চোখ কপালে তুলে বলেন, “ওমা! একটা রােলার স্কেট দিয়ে কী করবে? এক পায়ে রােলার স্কেট পরে ন্যাংচাতে ন্যাংচাতে যাবে নাকি?” সাগর চোখ পাকিয়ে বলল, “যাও!” আবু বললেন, “নাকি একটা রােলার স্কেটে দুই পা ঢুকিয়ে ব্যাঙের মতাে লাফাতে লাফাতে যাবে?” সাগর তখন তার আব্বকে ধাক্কা দিয়ে বলল, “যাও, আব্দু! তুমি খালি ঠাট্টা করাে! আমি কি একটা রােলার স্কেট কিনতে বলেছি? দুই পায়ের জন্যে দুইটা। একটা মানে হচ্ছে দুইটা।”
বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরী পাঠকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি মূলত এ দেশের একজন বিখ্যাত লেখক, পদার্থবিদ এবং শিক্ষাবিদ। কিশোর সাহিত্য, শিশুতোষ গ্রন্থ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গণিত বিষয়ক বই এর জন্য খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ফয়জুর রহমানের চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি ডিগ্রী অজর্নের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি সম্পন্ন করে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ ল্যাবেও গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সবসময়ই এ দেশের কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হয়েছে। কিশোর সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ক অজস্র গ্রন্থ দিয়ে তিনি আলোকিত করে তুলেছেন এদেশের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনোজগত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমূহ, যেমন- দীপু নাম্বার টু, আমার বন্ধু রাশেদ, আমি তপু, শান্তা পরিবার, দস্যি ক’জন ইত্যাদি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। তার বেশ কিছু গল্প পরবর্তীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হিসেবে টিভি পর্দায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্টও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডও তাঁর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বই সমগ্র সকল বইপড়ুয়াকেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার পুরষ্কৃত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (২০০৪) এবং শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদকসহ (২০০৪) অগণিত পুরষ্কার অর্জন করেছেন গুণী এই সাহিত্যিক।