ফ্ল্যাপে লিখা কথা অনতুর রোল নম্বর ১৩। ভীষণ দুষ্ট ও। কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে- ও স্কুল মাঠের এক কোণায়। হেডস্যার ওকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন এখানে। কিন্তু ওর বন্ধু দীপ্র, বিটলু, মৃদুল আর অয়ন জানে না কেন ওভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে অনতুকে। যখন জানে তখন চোখ বড় বড় হয় যায় ওদের। আবাসিক স্কুলে পড়ে ওরা। লেখাপড়ায় বেশ ভালো, তবে মারাত্নক একটা দুষ্টুমি করে ওরা প্রায়ই। রাতে স্কুল থেকে একসঙ্গে বের হয়ে অন্যের বাগান থেমে আম, লিচু, আনারস চুরি করে কায়। শুধু এ দুষ্টমিটাই , অন্য কোনো দুষ্টমি না। এ রকম এক রাতে ওরা দেখতে পায় ওদের স্কুলের রন, বাদল, টোটন আর ঝন্টুও স্কুলের বাইরে যাচ্ছে। কিন্তু ওরা কেন বাইরে যায় তা বুঝতে পারে না দীপ্ররা। চিন্তা করতে থাকে কেন ওরা এতরাতে বাইরে যায়?
নতুন একটা টিচার এসেছেন ওদের স্কুলে। আরেক রাতে ওরা দেখে নতুন স্যার তার রুম থেকে বের হয়ে একা একা স্কুলের মাঠ দিয়ে হাঁটছেন। কিন্তু তিনি কোনো দিকে তাকাচ্ছেন না, কোনো কিছু দেখছেনও না। অনতু স্যারের পিছু পিছু গিয়ে স্যারের গায়ের চাদরটা খুলে নিয়ে আসে, তবু কিছু বলেন না স্যার, তিনি কিছু টেরও পান না। কেন? স্যার কি তবে... রাতে একদিন ভূত দেখে অজ্ঞান হয়ে যায় রতন। তাহলে কি রতনদের স্কুলে কোনো ভূত বাস করে? ওদের স্কুলে ছোট একটা চোরও ধরা পড়ে এক রাতে। কিন্তু চোরটাকে চুপি চুপি ছেড়ে কেন অনতুরা?
এ সবকিছু জানার জন্য দীপ্ররা হন্য হয়ে ছোটে। একদিন তারা জেনেও যায় সবকিছু। গভীর রাতে স্যারের এভাবে হাঁটার কারণ জানতে পেরে অবাক হয়ে যায় ওরা। রতনরা অদ্ভুত এক কাজে বাইরে যায়, তা জেনে চোখে পানি এসে যায় ওদের।
বর্তমান সময়ের তরুণ বাংলাদেশী লেখকদের তালিকা তৈরি করতে গেলে অনায়েসেই প্রথম সারিতে জায়গা করে নেবেন কথাসাহিত্যিক সুমন্ত আসলাম। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায়, মা রওশনারা পারুল ও বাবা মরহুম সোহরাব আলী তালুকদার। স্ত্রী ফারজানা ঊর্মি আর মেয়ে সুমর্মীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই লেখকের সংসার। সিরাজগঞ্জে বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতেই বই পড়ার হাতেখড়ি তার। সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলেও লেখালেখির শুরু ঢাকায় আসার পরে। ছোটগল্পের বই ‘স্বপ্নবেড়ি’ তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই, যা প্রকাশনায় ছিল ‘সময় প্রকাশন’। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে, চাইল্ড ড্রিম সোসাইটি নামের একটি সংগঠনে। এছাড়াও জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতা পেশার সাথে। পাঠক জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে সুমন্ত আসলামের সেরা বই হিসেবে নাম উঠে আসবে ‘হয়তো কেউ এসেছিল’, ‘জানি না কখন’ বা ‘কে তুমি’ অথবা ‘যদি কখনো’ এর মতো জনপ্রিয় সব বই এর নাম । এছাড়াও ‘নীল এই যে আমি!’, ‘আমি আছি কাছাকাছি’, ‘অ্যালিয়ান’, ‘জানালার ওপাশে’, ‘রোল নাম্বার শূন্য’, ‘বীভৎস’, ‘কেউ একজন আসবে বলে’, ‘জিনিয়াস জিনিয়ান’, ‘কোনো কোনো একলা রাত এমন’, ‘তবুও তোমায় আমি’, ‘অনুভব’, ‘মিস্টার ৪২০’, ‘স্পর্শের বাইরে’, ‘ভালো থেকো ভালোবেসে’, ‘ডাঁটি ভাঙা চশমা রাফিদ’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ’, ‘প্রিয়ব্রতর ব্যক্তিগত পাপ’, ‘জ্যোৎস্না বিলাস’, ‘মহাকিপ্পন’, ‘তপুর চালাকি’, ‘আশ্চর্য তুমিও!’, ‘হাফ সার্কেল’, ‘কঞ্জুস’, ‘মাঝরাতে সে যখন একা’, ‘আই এম গুড ডু’, ‘আই সে দ্য সান’, ‘তুমি ছুঁয়ে যাও বৃষ্টি তবু’সহ আরো অনেক বই রয়েছে লেখক সুমন্ত আসলাম এর বই সমগ্র এর তালিকায়। এছাড়াও সিরিজ আকারে লিখেছেন ‘বাউন্ডুলে’ ও ‘পাঁচ গোয়েন্দা’র মতো জনপ্রিয় কিছু বই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের কাছে, এমনকি একুশে বই মেলাতেও সুমন্ত আসলাম এর বই সমূহ এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। ভাষাগত সারল্য ও সাবলীলতা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ। মানুষকে কেন্দ্র করে তাকে আবর্তিত করে যা যা আছে তা-ই মূলত তার লেখার বিষয়বস্তু।