ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলবর্তী সুন্দরবন নামে যে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট তার ইকোলজিতে মানুষ, জীবজন্তু, পশুপাখি, বৃক্ষলতাগুলো, মাটি এবং পানির সহাবস্থান প্রাচীনকাল থেকে। এই সহাবস্থানে শান্তি বিঘ্নিত হতে শুরু করে যখন মানুষ এই অরণ্যের ইকোলজিতে ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়, এমন ভাবে অনুপ্রবেশ ও হস্তক্ষেপ শুরু। অধুনা এই নেতিবাচক প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রতিক্রিয় যা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্যতম পৃথিবীর এই বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করে তুলেছে।
সুন্দরবনের এই বৃহৎ ক্যানভাসের পটভূমিতে উপন্যাসে বিধৃত হয়েছে একটি বিশেষ শ্রেণীর জীবনযাপন ও তাদের সঙ্গে সুন্দরবনের সম্পর্কের নানা দিক। যে আর্থ-সামাজিক পরিবেশে তারা অস্তিত্ব টিকেয়ে রাখার সংগ্রামে লিপ্ত তার ওপরেও আলোকপাত করেছে তাদের এই কাহিনী। মৌচাক ভেঙ্গে যারা প্রতিবছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে মধু সংগ্রহ করে সেই মৌয়ালদের জীবন নিয়ে এই লেখায় ক্ষুদ্রের মধ্যে রয়েছে বিশালতার ব্যাপ্তি। একটি মৌয়াল দলের মধু সংগ্রহের অভিযানের ভেতর ফুটে উঠেছে তাদের জীবন সংগ্রামের কষ্ট, সহিষ্ণুতা এবং বৈরি পরিবেশে সাহস ও বীরত্বের দৃষ্টান্ত। পাশাপাশি দেখানো হয়েছে মধু মৌমাছিদের অবিশ্বাস্য যূথবদ্ধ জীবনের বিচিত্র সব দিকে যার সমন্বয়ে মধু সংগ্রহ হয়ে উঠেছে অল্প মধুর এক কাহিনী। মানুষ, প্রকৃতি আর জীবজন্তুর বাঁচার লড়াইয়ে সবাইকে চরম মূল্য দিতে হয় কখনো কখনো। মৌয়ালদের এবং মধু মৌমাছিদের নিয়ে লেখা এটাই প্রথম উপন্যাস বাংলায় যা পাঠকের কৌতূহল সৃষ্টি করবে তাদের সম্বন্ধে আরোও বিষদবাবে জানতে।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।