সূচিপত্র *সূচনা পর্ব *আগের কথা *শেকল ভাঙার পালা *নতুন জোয়াল *অন্ধকারের দশ বছর *আর এক রাহু *অগ্নিপরীক্ষার নয় মাস *স্বাধীন বাংলাদেশ *অমানিশার অন্ধকার *জিয়ার কাল *এরশাদ পর্ব *আবার শুরু থেকে *শেষ পর্ব *পরিশিষ্ট-১(পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি) *পরিশিষ্ট-২(পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ) *পরিশিষ্ট-৩(১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রুন্টের ২১ দফা) *পরিশিষ্ট-৪(যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা) *পরিশিষ্ট-৫(আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা) *পরিশিষ্ট-৬(পাকিস্তানের গণপরিষদ নির্বাচন) *পরিশিষ্ট-৭(সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা) *পরিশিষ্ট-৮(১৯৫৯ সালের এবডোর আওতায় যারা পড়েছিলেন) *পরিশিষ্ট-৯(গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সোহরাওয়ার্দীর ঐতিহাসিক পত্র) *পরিশিষ্ট-১০(আওয়ামী লীগের ১১ দফা) *পরিশিষ্ট-১১(ঐতিহাসিক ৬-দফা) *পরিশিষ্ট-১২(পিডিএম গঠন ও ৮ দফা) *পরিশিষ্ট-১৩(আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তদের তালিকা) *পরিশিষ্ট-১৪(কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা) *পরিশিষ্ট-১৫(গোলটেবিল বৈঠকে আমন্ত্রিতদের তালিকা) *পরিশিষ্ট-১৬(আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ) *পরিশিষ্ট-১৭(১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ) *পরিশিষ্ট-১৮(প্রবাসী সরকার গঠন) *পরিশিষ্ট-১৯(স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র) *পরিশিষ্ট-২০(মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারদের নাম) *পরিশিষ্ট-২১(আত্মসমর্পণের দলিল) *পরিশিষ্ট-২২(বাকশালের সদস্যদের নাম) *পরিশিষ্ট-২৩(খন্দকার মুশতাক আহমদের মন্ত্রিসভা) *পরিশিষ্ট-২৪(রাজনৈতিক দলবিধি) *পরিশিষ্ট-২৫(জাগদল) *পরিশিষ্ট-২৬(১৫ ও ৭ দলীয় জোটের ৫ দফা) *পরিশিষ্ট-২৭(তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা) *পরিশিষ্ট-২৮(ফারাক্কা চুক্তি) *পরিশিষ্ট-২৯(পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি) *পরিশিষ্ট-৩০(যমুনা সেতু)
বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে মিজানুর রহমান চৌধুরী একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। আকর্ষণীয়, রসাত্মক অথচ জ্ঞানগর্ভ বাগ্মিতা ও অপূর্ব সাংগঠনিক দক্ষতা তাঁকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন করেছিল। দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে তাঁকে আখ্যায়িত করলে অত্যুক্তি করা হবে না। ব্রিটিশ-ভারতে তাঁর রাজনীতির শুরু। পাকিস্তান আমলে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী। আর বাংলাদেশ আমলে সরকার ও বিরােধী দল-উভয় ক্ষেত্রেই শীর্ষস্থানে। রাজনীতির এই তিন কালে তিনি কখনও কর্মী, কখনও সংগঠক, কখনও নেতৃত্বে, আবার কখনও ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছেন। অর্ধ-শতকের অধিককালের এই বৈচিত্র্যময় রাজনীতিকের স্মৃতির ভাণ্ডার পরিপূর্ণ মূল্যবান অভিজ্ঞতায়। “রাজনীতির তিন কাল” গ্রন্থে এরই ব্যক্তিক্রমধর্মী বর্ণনা, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য। বাঙালি মুসলিম রাজনীতিকদের রাজনৈতিক বিষয়ক গ্রন্থের সংখ্যা খুবই সীমিত। এই গ্রন্থে বর্ণাঢ্য রাজনীতির ও রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের হৃদয়গ্রাহী বিবরণ পাঠকদের বিশেষ করে রাজনীতিকদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্যানুসন্ধানীদের পিপাসা নিবৃত্ত করবে। বর্ষীয়ান জননেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী ১৯২৮ সালের ১৯ অক্টোবর চাঁদপুর শহরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি আইন বিষয়েও অধ্যয়ন করেন। শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু। রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৪৫ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্রলীগের কুমিল্লা জেলা শাখার সহ-সভাপতি হিসেবে। ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ ভলান্টিয়ার কোরের তিনি ক্যাপ্টেন ছিলেন। ১৯৫০ সালে তিনি ফেনী কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঐ সময় তিনি তার মেজদা জি, রহমানের কর্মস্থলের বাসায় থাকিয়া ফেনী কলেজ লেখাপড়া করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চাঁদপুর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৬২, ১৯৬৫ ও ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে দলের অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি ঐতিহাসিক ৬-দফা আন্দোলনের প্রধান সংগঠক হিসেবে কারাবরণ করেন। এর পূর্বেও ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে নিরাপত্তা আইনে তিনি গ্রেফতার হন। জেলে থাকাকালীন মনােনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং নির্বাচনের পূর্বে হাইকোর্ট তাকে মুক্তি প্রদান করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি সংযুক্ত বিরােধী দলের আহ্বায়ক ছিলেন এবং ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান সংগঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিস্ময়কর বিজয়ে তার ভূমিকা ছিল গৌরবময়। ১৯৭১ সালে আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন শীর্ষস্থানীয় সংগঠক। ১৯৭২ সালে তিনি তথ্য ও বেতারমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী নিযুক্ত হন। পরে তিনি মন্ত্রিসভা হতে পদত্যাগ করেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ১৯৭৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত করেন এবং যুগ্ম-আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। বাকশাল প্রশ্নে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৭৭ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয় এবং তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি জনদলের প্রতিষ্ঠাতা-ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৯৮৫ সালে এর মহাসচিব ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি ডাক ও টেলিযােগাযােগ মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় ফ্রন্ট ও পরবর্তীতে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন এবং সংসদের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে তিনি সপ্তম এবং ১৯৯১ সালে অষ্টমবার জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন। এরশাদ সরকারের পতনের পর তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং দলকে বিপর্যয়ের হাত হতে রক্ষা করে সুসংগঠিত করেন। এ সময়ে ১৯৯১ সালে তিনি কারাবরণ করেন। ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে তিনি জাতীয় পার্টির কাউন্সিল অধিবেশনে দলীয় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে হারারেতে অনুষ্ঠিত অষ্টম জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে ও ১৯৭৪ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। সত্তর দশকের শেষভাগে ‘ফিলিস্তিনিদের অধিকার সংরক্ষণ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পর্তুগালের লিসবনে তিনি আমন্ত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ করেন। রাজনীতির সঙ্গে সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তাঁর অবদান উল্লেখযােগ্য। বেগম সাজেদা মিজান চৌধুরী তাঁর সহধর্মিণী। জননেতা মিজান চৌধুরীর জীবন সংগ্রামের আজীবন সঙ্গী এবং সহযাত্রী। তিনি পবিত্র হজ্জব্রত পালন করেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত ও নজরুলগীতি শােনা ও বই পড়া তাঁর প্রিয় শখ। -শেখ শহীদুল ইসলাম