"আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর " বইয়ের সূচি ও ভূমিকাঃ সূচিঃ রাজনীতির ক খ খিলাফত ও অসহযােগ বেংগল প্যাক্ট প্রজা-সমিতি প্রতিষ্ঠা ময়মনসিংহে সংগঠন প্রজা-আন্দোলন দানা বাঁধিল প্রজা আন্দোলনের শক্তি বৃদ্ধি আইন পরিষদে প্রজা পার্টি নির্বাচন-যুদ্ধ হক মন্ত্রিসভা গঠন কালতামামি কৃষক-প্রজা পার্টির ভূমিকা পাকিস্তানী আন্দোলন পাকিস্তান হাসিল কলিকাতায় শেষ দিনগুলি আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা যুক্তফ্রন্টের ভূমিকা পাপ ও শাস্তি ঐতিহাসিক মারি-প্যাক্ট আত্মঘাতী ওয়াদা খেলাফ ওযারতি প্রাপ্তি ওযারতি শুরু ভারত সফর কত অজানারে ওযারতির ঠেলা নৌকার হাইলে মুজিব সংবিধান রচনা স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচন ভূমিকাঃ ছাত্রাবস্থা হইতেই সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী এবং স্যার সৈয়দ আহমদ-এর একজন অনুসারী হিসাবে একটি বিশেষ রাজনৈতিক চিন্তা এবং আদর্শে বিশ্বাসী হইয়া আমার জীবন গড়িয়া উঠিয়াছে। মরহুম আবুল মনসুর আহমদ-এর ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর বইখানিতে আমার আজীবনের লালিত স্বপ্ন এবং সেই চিন্তা ও আদর্শের প্রতিচ্ছবি রহিয়াছে। এই ঐতিহাসিক বইখানি ছাপাইবার জন্য অনেক প্রকাশক লালায়িত আছেন। আমি জানি তাহাদের সেই লালসা শুধু আর্থিক কারণে রাজনৈতিক বা জাতীয় কোন উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে নহে। কিন্তু এই বইখানি ছাপাইবার পিছনে আমার লালসা – আদর্শের, অর্থের নহে। বইখানির লেখক মরহুম আবুল মনসুর আহমদ আমার মনের গভীরের সেই চিন্তা ও আদর্শের সন্ধান পাইয়াছিলেন এবং সেই কারণেই জীবদ্দশায় তিনি কখনই তাঁহার এই অমূল্য বইখানি প্রকাশনার সুযােগ হইতে আমাকে বঞ্চিত করেন নাই। তাহার ইনতেকালের পর সময়ের বিবর্তনে সাময়িক পরিবর্তন হইলেও তাঁহার সুযােগ্য পুত্র এককালের সংগ্রামী ছাত্রনেতা, প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক, দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক এবং দেশের সর্বাধিক প্রচারিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার কলামিস্ট ভ্রাতৃপ্রতিম জনাব মহবুব আনাম তাঁহার সুযােগ্য পিতার মনের খবর জানিতেন বলিয়াই এই ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ প্রকাশনার দায়িত্ব এখনও পর্যন্ত আমার উপরেই রাখিয়াছেন। জনাব মহবুব আনাম ইচ্ছা করিলে বইখানি প্রকাশনার দায়িত্ব অন্যকে দিয়া প্রচুর অর্থ পাইতে পারেন কিন্তু তিনি তাহা করেন নাই — তাহার এই উদারতা ও মহানুভবতার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ।
বিশিষ্ট লেখক, দেশভাগের সময়কালের খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ এবং শক্তিমান সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন বিচিত্র গুণের অধিকারী একজন মানুষ। আবুল মনসুর আহমদ এর বই সমূহ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তিনি বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গাত্মক লেখকদেরও একজন। ‘আয়না’, ‘ফুড কনফারেন্স’, ‘গালিভারের সফরনামা’র মতো কালজয়ী ব্যঙ্গরচনাগুলো আবুল মনসুর আহমদ রচনাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইটি হলো তার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত বই। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত এ বইটি তার আত্মজীবনীমূলক রচনা। এছাড়াও ‘আত্মকথা’, ‘শেরে বাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু’- বইগুলোও স্মৃতিচারণমূলক। আবুল মনসুর আহমদ এর বই সমগ্রতে আরো আছে ‘সত্য মিথ্যা’, ‘জীবনক্ষুধা’, ‘আবে হায়াত’, ‘বাংলাদেশের কালচার’, ‘আসমানী পর্দা’, ‘বেশি দামে কেনা কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা’ ইত্যাদি। আবুল মনসুর আহমদের জন্ম ১৮৯৮ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে। ১৯১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর কলকাতার রিপন কলেজে ভর্তি হন আইন পড়বার জন্য। পড়ালেখা করার সময় খিলাফত এবং অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি। শিক্ষাজীবন শেষে ৯ বছর ময়মনসিংহে আইন ব্যবসা করেন। এরপর কলকাতায় গিয়ে সাংবাদিক জীবনের সূচনা করেন। ইত্তেহাদ, সুলতান, নাভায়ু, মোহাম্মদী, নবযুগসহ বেশ কিছু পত্রিকায় কাজ করেন তিনি। দেশভাগের কিছুকাল পূর্বেই ইত্তেহাদের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ দায়িত্বে থেকে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনেও ভূমিকা পালন করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে আবুল মনসুর আহমদ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুসারী ছিলেন। ১৯৪০ এর দশকে সক্রিয়ভাবে পাকিস্তান আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি ১৯৫৪ এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। আইয়ুব সরকারের আমলে তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য কারারুদ্ধ হন। বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের অন্যতম এক প্রতিষ্ঠাতা তিনি।