“তিন গোয়েন্দা ভলিউম ২/১” বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ তারিখ । যাওয়া দরকার। ভ্রূকুটি করলেন মেরিচাচী। জানেন, বাধা দিয়ে লাভ হবে না, যাবেনই রাশেদ পাশা। আশপাশে যেখানে যখন পুরানাে জিনিসপত্র নিলাম হয়, তার যাওয়া চাইই। যা পান, কিনে এনে তূপ দেন পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে। দেখে মনে হয়, অদরকারী। জিনিস, কিন্তু এসব জিনিসেরও দরকার পড়ে লােকের, কিনতে আসে তারা। বেশ ভালই লাভ পুরানাে জিনিসে। তবে এমন সব জিনিসও নিয়ে আসেন রাশেদ চাচা, যেগুলাে একেবারেই বাতিল। হয়তাে কোনদিনই বিক্রি হবে না, সেসব নিয়েই মেরিচাচীর আপত্তি। কিন্তু চাচীর কথায় গােড়াই কেয়ার করেন চাচা। ‘ক্যাসটিলাের জিনিসপত্র সব বেচে দেবে ওরা, আবার বললেন চাচা। ‘এমনকী, এই ক্রিস্টাল বলটাও,' ছবিতে আঙুল রাখলেন। ‘দা ভ্যাম্পায়ারস লেয়ারে ব্যবহার করা হয়েছিল এটা। ‘ওসব অ্যানটিক জিনিস কেনার মানুষ আলাদা, তাদের আলাদা ব্যবসা, প্রতিবাদ করলেন চাচী । তা ছাড়া দামও নিশ্চয় অনেক উঠবে। . তা উঠবে, কাগজটা এক পাশে সরিয়ে রাখলেন চাচা। অ্যানটিক যারা জোগাড় করে, তারা তাে পাগল হয়ে ছুটে আসূবে।' ‘তা হলে আর গিয়ে কী করবে? উঠে টেবিল পরিষ্কার করতে শুরু করলেন চাচী। কাপ-প্লেটগুলাে নিয়ে গিয়ে সিংকে চুবিয়ে রাখলেন। একটা একটা করে তুলে ধুয়ে মুছে সাজিয়ে রাখতে লাগলেন তাকে। পথে ঘােড়ার খুরের শব্দ হতেই কান পাতলেন। “ওই যে, পারকারদের মেয়েটা যাচ্ছে।' জানালার কাছে এসে দাঁড়াল কিলাের। হ্যা, পারকারদের মেয়েটাই। অন্য দিনের মতই ঘােড়ায় চেপে চলেছে। চমৎকার একটা মাদী আপালুসা, বাদামী ললাম থেকে যেন তেল চুইয়ে পড়ছে। লেজের কাছে খানিকটা সাদা ছােপ আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে ঘােড়াটাকে। খুব সুন্দর!' আপন মনেই বলল কিশাের । আপালুসা আরও দেখেছি, কিন্তু এমনটি দেখিনি!' ঘােড়ার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করল কিশোের, কিন্তু আরােহিণীর ব্যাপারে কোন মন্তব্যই করল না। মাথা উঁচু করে বসে আছে মেয়েটা, নজর সামনে, ডানে-বাঁয়ে কোন দিকেই ফিরছে না। ‘সৈকতে যাচ্ছে বােধহয়, কাজ করতে করতেই বললেন মেরিচাচী, ‘দৌড় করাতে। মেয়েটা বড় বেশি একা। রুজের কাছে শুনলাম, বাবা-মা ইউরােপে থাকে।' ‘জানি,' বলল কিশাের। সে আরও জানে, পারকারদের বাড়ি দেখাশােনা করে রুজ, মেয়েটাকেও। বিকেলে প্রায়ই ইয়ার্ডে আসে রুজ, মেরিচাচীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করে। আশপাশে ঘুরঘুর করে তখন কিশাের, কথা শােনে। মাস কয়েক আগে মােড়ের কাছের পুরানাে প্রাসাদটা কিনেছেন মিস্টার পারকার। আগে যা ছিল তা-ই রয়েছে বাড়িটা, সরানাে দরকার মনে করেননি তিনি। কিশাের জানে, বাড়িটার খাবার ঘরে পুরানাে আমলের মস্ত এক ঝাড়বাতি ঝােলানাে আছে। বাতিটা আগে ছিল ভিয়েনার এক জমিদারের প্রাসাদে। জানে, মিসেস পারকারের একটা হীরের হার আছে, ওটার আগের মালিক ছিল, ইউজেনি-র
রকিব হাসান বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের স্রষ্টা ও কিশোর-কিশোরীদের সেরা পছন্দের লেখকদের শীর্ষ তালিকার একজন। তাঁর মাধ্যমেই বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীরা গোয়েন্দা কাহিনি ও তিন গোয়েন্দা সিরিজের সাথে পরিচিত হতে থাকে। শুধু তাই নয়, তিনি বহু ক্লাসিক ও কিশোর রোমহর্ষক সিরিজের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। লেখালেখির দীর্ঘ ৫০ বছরে চারটি প্রজন্ম অতিবাহিত হলেও আজও তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। মূলত তিনি নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন বিধায় মিডিয়ায় তাঁর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবুও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেশ বিদেশে তাঁর লক্ষ লক্ষ পাঠকশ্রেণি রয়েছে। যাদের ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনী এবং পরবর্তী প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের কাছেও রকিব হাসান অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক। বর্তমান প্রজন্মের পাঠক-ভক্তদের কাছেও ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজটি’ এবং ‘কিশোর, মুসা, রবিন’ চরিত্রটি অসম্ভব জনপ্রিয়। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও কিশোর-কিশোরীসের সেরা পছন্দের এই গুণী লেখকের জন্ম কুমিল্লায়, ১৯৫০ সালে। মূলত এক সময়ে পাঠকের হাতে স্বল্পমূল্যে বই তুলে দিতে এবং নিত্য নতুন পাঠক সৃষ্টি করতে ‘পেপারব্যাক সংস্করণে’ প্রকাশিত স্বনামে-বেনামে তাঁর লেখা বহু বই তিন দশক ধরে বেস্টসেলার ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। আজও তাঁর প্রকাশিত বইগুলো সমান জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সকল কিছুকে ছাপিয়ে তাঁর ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজটি’ এবং ‘কিশোর, মুসা, রবিন’ চরিত্র কালজয়ী জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। স্বনামে-বেনামে ও ছদ্মনামে এই তিন ক্যাটাগরিতেই তাঁর জনপ্রিয়তায় কোন ছেদ পড়েনি। তিনি সকল ধরনের মিডিয়া ও প্রচার প্রচারণাকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করতেন বলে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই লেখকের ফেসটি তেমন পরিচিত নয়। কিন্তু আমরা বাস্তবতায় দেখেছি যে, যখন কোন পাঠক একটু জানতে পেরেছেন যে, রকিব হাসান বইমেলায় অমুক প্রকাশনীতে আছেন, তখন একে একে নিমিষেই প্রচÐ ভীড়ের সৃষ্টি হতো। এমনকি পাঠকের ভীড়ে তাঁকে খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে যেতো। এই গুণী লেখকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় পাঁচ শতাধিক। তাঁর লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে, ছদ্মনামে। স্বনামে প্রথম প্রকাশিত বইটি ছিল অনুবাদগ্রন্থ, ব্রাম স্টোকারের ‘ড্রাকুলা’। এরপর অনুবাদ করেছেন জুল ভার্ন, জিম করবেট, কেনেথ অ্যান্ডারসন, মার্ক টোয়েন, রবার্ট লুই স্টিভেনসন, হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড, ফ্রেড জিপসন, রেনে জুঁইঅ, এরিক ফন দানিকেন, ফার্লে মোয়াট, জেরাল্ড ডুরেল-এর মত বিখ্যাত লেখকদের অনেক ক্লাসিক বই। অনুবাদ করেছেন মহাক্লাসিক ‘অ্যারাবিয়ান নাইটস’ ও এডগার রাইস বারোজ- এর ‘টারজান’ সিরিজ। তাঁর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে ছোটদের নিয়ে রচিত ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজটি। এই সিরিজের তিনটি মূল চরিত্র ‘কিশোর-মুসা-রবিন’কে নিয়ে লিখেছেন আরও তিনটি সিরিজ ‘তিন বন্ধু’, ‘তিন কিশোর গোয়েন্দা’ ও ‘গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন’। লিখেছেন ‘কিশোর গোয়েন্দা’ সিরিজ ‘খুদে গোয়েন্দা’ সিরিজ, জাফর চৌধুরী ছদ্মনামে ‘রোমহর্ষক’ সিরিজ এবং আবু সাঈদ ছদ্মনামে ‘গোয়েন্দা রাজু’ সিরিজ। এ ছাড়া কিশোরদের জন্য বেশ কিছু ভূতের বই ও সাইন্স ফিকশনও লিখেছেন তিনি। তাঁর লেখা কিশোর-কিশোরীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে এবং সেরা বিনোদন যোগায়। আমরা এই গুণী ও অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখকের সুস্থ জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। মহান আল্লাহপাক আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করুন। আমীন।