"তাফসীরে ইবনে কাছীর ১১তম খণ্ড "বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর উপর অবতীর্ণ এক অনন্য মু'জিযাপূর্ণ আসমানী কিতাব। আরবী ভাষায় নাযিলকৃত এই মহাগ্রন্থ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও ইঙ্গিতময় ভাষায় মহান রাব্বল আলামীন বিশ্ব ও বিশ্বাতিত তাবৎ জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার বিশ্ব-মানবের সামনে উপস্থাপন করেছেন। মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনসম্পৃক্ত এমন কোন বিষয় নেই, যা পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত হয়নি। বস্তুত আল-কুরআনই সত্য ও সঠিক পথে চলার জন্য আল্লাহপ্রদত্ত নির্দেশনা, ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। সুতরাং পরিপূর্ণ ইসলামী জীবন গঠন করে দুনিয়া ও আখিরাতে মহান আল্লাহ্ রাব্বল আলামীনের পূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে পবিত্র কুরআনের দিক-নির্দেশনা ও অন্তর্নিহিত বাণী সম্যক অনুধাবন এবং সেই মােতাবেক আমল করার কোনও বিকল্প নেই। পবিত্র কুরআনের ভাষা, শব্দচয়ন, বর্ণনাভঙ্গী ও বাক্য বিন্যাস চৌম্বক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, ইঙ্গিতময় ও ব্যঞ্জনাধর্মী। তাই সাধারণের পক্ষে এর মর্মবাণী ও নির্দেশাবলী পূর্ণভাবে অনুধাবন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমনকি ইসলামী বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও কখনও কখনও এর মর্মবাণী সম্যক উপলব্ধি করতে সক্ষম হন না। এই সমস্যা ও অসুবিধার প্রেক্ষাপটেই পবিত্র কুরআনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সম্বলিত তাফসীর শাস্ত্রের উদ্ভব। তাফসীর শাস্ত্রবিদগণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর পবিত্র হাদীসসমূহকে মূল উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে কুরআন ব্যাখ্যায় নিজ নিজ মেধা, প্রজ্ঞা ও বিশ্লেষণ দক্ষতা প্রয়ােগ করেছেন এবং মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের শিক্ষা ও মর্মবাণীকে সহজবােধ্য করে উপস্থাপন করেছেন। এভাবে বহু মুফাসির পবিত্র কুরআনের শিক্ষাকে বিশ্বব্যাপী সহজবােধ্য করার কাজে অনন্য সাধারণ অবদান রেখে গেছেন। এখনও এই মহৎ প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। তাফসীর গ্রন্থসমূহের অধিকাংশই প্রণীত হয়েছে আরবী ভাষায়। ফলে বাংলাভাষী পাঠক সাধারণ এসব তাফসীর গ্রন্থ থেকে উপকৃত হতে পারেন নি। এদেশের সাধারণ মানুষ যাতে মাতৃভাষার মাধ্যমে পবিত্র কুরআনের মর্মবাণী অনুধাবন করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আরবী ও উর্দু প্রভৃতি ভাষায় প্রকাশিত প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযােগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহ বাংলা ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলাে প্রসিদ্ধ তাফসীর আমরা অনুবাদ ও প্রকাশ করেছি। আরবী ভাষায় রচিত তাফসীরগ্রন্থগুলাের মধ্যে আল্লামা ইসমাঈল ইবনে কাছীর (র) প্রণীত তাফসীরে ইবনে কাছীর’ মৌলিকতা, স্বচ্ছতা, আলােচনার গভীরতা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ-নৈপুণ্যে ভাস্বর এক অনন্য গ্রন্থ। আল্লামা ইবনে কাছীর (র) তাঁর এই গ্রন্থে আলকুরআনেরই বিভিন্ন ব্যাখ্যামূলক আয়াত এবং মহানবী (সা)-এর হাদীসের আলােকে কুরআনব্যাখ্যায় স্বীয় মেধা, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতাকে ব্যবহার করেছেন। এ যাবত প্রকাশিত তাফসীর গ্রন্থগুলাের মধ্যে আর কোন গ্রন্থেই তাফসীরে ইবনে কাছীর-এর অনুরূপ এত বিপুলসংখ্যক হাদীস সন্নিবেশিত হয়নি। ফলে তাঁর এই গ্রন্থখানি সর্বাধিক নির্ভরযােগ্য তাফসীর গ্রন্থ হিসেবে
আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর জন্ম ১৩০১ খ্রিস্টাব্দে বসরার (বর্তমান সিরিয়া) মামলুক সালতানাতে। তার পুরো নাম ইসমাঈল ইবন উমর ইবন কাসীর ইবন দূ ইবন কাসীর ইবন দিরা আল-কুরায়শী হলেও তিনি ইবনে কাছীর নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি কুরায়েশ বংশের বনী হাসালা গোত্রের সন্তান। তার জন্মস্থান এবং জন্ম তারিখ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তার শিক্ষাজীবন এবং শৈশব নিয়েও খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। তবে মামলুক সালতানাতেই তিনি বড় হয়েছেন, এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণ নিশ্চিত। কৈশোরে তিনি ফিরিঙ্গীদের যুদ্ধ, ক্রুসেড, তাতারদের আক্রমণ, শাসকদের অন্তর্কোন্দল, বিদ্রোহ করে ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস, দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানির মতো যাবতীয় দুর্যোগ আর দুর্দশা দেখে দেখে বড় হয়েছেন। কর্মজীবনে ইবনে কাছীর রহ. উন্মুসসা’ ওয়াত তানাকুরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। কুরআন, হাদিস, তাফসির, ইতিহাস, গণিত সহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তিনি বিচরণ করেন। শায়খ তকী উদ্দী (রহঃ), উস্তাদ হাজরী (রহঃ), ইবনুল কালানসী (রহঃ) প্রমুখ প্রবাদত্যুল্য শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে নিজের জ্ঞানের আলোয় তিনি আলোকিত করেছিলেন মধ্যযুগীয় মুসলিম জ্ঞানপিপাসুদের। ১৩৭৩ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে তার মৃত্যু হয়। আল্লামা ইব্নে কাছীর রহ. এর বই সমূহ ইসলামি দর্শন, ফিকহ শাস্ত্র, তাফসির ও ইতিহাস নির্ভর। তার রচিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’-এর জন্য তিনি বিশ্বজোড়া সমাদৃত। পবিত্র কুরআনের কাছীরগুলোর মাঝে তার এই গ্রন্থটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এবং প্রামাণ্য। ১১ খণ্ডে প্রকাশিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’, ‘কাসাসুল আম্বিয়া’, ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’, ‘কিতাবুল আহকাম’ সহ বেশ কিছু জ্ঞানগর্ভ বই রয়েছে আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর বই সমগ্রতে।