“আামার আমি” বইয়ের আমার কিছু কথা: বহু বিশেষণে উত্তমকুমার আজ স্নাত। সে সব বিশেষণের প্রতি আমি বিন্দুমাত্র আকৃষ্ট নই। যাঁকে ঘিরে আজ এই বিশেষণ, আমি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। সেই মানুষটির, সেই কিংবদন্তির নায়ক-এর ফেলে আসা কয়েকটি রক্তাক্ত পদচিহ্ন দেখে। প্রতিভা, কর্মক্ষমতা, সাধনা আর একনিষ্ঠতা দিয়ে আজকের বিদগ্ধ জনমানসের একান্ত ভালবাসার জগতে পৌঁছবার জন্য অত্যুগ্র আকাঙক্ষা নিয়ে, অজস্র কাঁটা-বিছানো বন্ধুর পথমাড়িয়ে যে মানুষটি সারাদেহ-মনকে ক্ষত-বিক্ষত করে উল্কার মত ছুটে আসছিলেন, অবশেষে যিনি সেই বন্ধুর পথ পেরিয়ে পৌছে গিয়েছেন তাঁর আরাধ্যশিল্প-চেতনার আলোকময় জগতে, আমি তাঁকে আমার সাংবাদিক মন থেকে অন্তরের সবটুকু শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছি মাত্র। আর তারই নিদর্শন এই “আমার আমি” ৷ অভিনয়-শিল্পের প্রতি, কলাশিল্পের সর্বস্তরের সব শ্রেণীর শিল্পীদের প্রতি, সাধারণ মানুষের প্রতি যাঁর অন্তরের একান্ত প্রীতি বার বার বর্ষিত হয়েছে, তাঁর সেই প্রগাঢ় প্রীতিকে প্ৰণতি জানাতেই আমি অগ্রণী হয়েছিলাম। আমাকে আকৃষ্ট করেছিলেন শুধুমাত্র শিল্পী উত্তমকুমার নন, বিরাট এক মানুষ উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়। সদা হাস্যময়, উদার মানুষ। প্রায় দশ বছর আগের কথা, উত্তমবাবু যখন সবচাইতে বেশি ব্যস্ত, যখন তিনি মধ্যাহ্নগগনের উজ্জ্বলতম সূৰ্য, যখন তাঁর চতুর্দিকে বৃত্তাকারে মানুষ তাঁকে কাজে কাজে বার বার অনুপ্রাণিত করি। অবশেষে আমার অনুলেখকের ভূমিকা। জন্ম নেয়। এই “আমার আমি’। আজ আমি চরম খুশি, আমি ধন্য সেই গ্রন্থের তৃতীয় ও পরিবর্ধিত রাজকীয় সংস্করণ দেখে, ঠিক তেমনি চরমতম ব্যথিত এই কারণে, যে রাজার জন্যে এই রাজকীয় সংস্করণ, সেই রাজা নেই। বছর দশেক আগে প্ৰসাদ পত্রিকায় এই আত্মজীবনী ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর মিত্র ও ঘোষ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম এবং পরে যখন ১৩৮১ সালে দে’জ পাবলিশিং থেকে দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়, তখন আমার অগ্রজ উত্তমকুমার বার বার বলেছেন, “দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হলে আমার জীবনের অনেক না-বলা কাহিনী উদঘাটন করবো” আমি জানি এই প্রথম পর্বে আমার পরম শ্রদ্ধেয়া বেণুদির (সুপ্রিয়া দেবী) কথা ছিলইনা বললে চলে, সেই সঙ্গে ছিলনা মহানায়ক উত্তমকুমারের ভালয়-মন্দয় মেশানো মানসিকতার বিশ্লেষণ। এবার সবই সংযোজিত হয়েছে। ’৮০ সালের গোড়া থেকেই “আামার আমি” বইয়ের শেষ ফ্ল্যাপের কথা: তোমাকে দেখবার জন্যে যখন জনতা উদ্বেল হয়ে ওঠে গাড়ী ঘোড়া ট্রাম বাস বন্ধ করে দেয়, পথে অবরোধ সৃষ্টি করে, ভেবো না, তারা কোন মুহুর্তের খেলাওয়ালা অভিনেতাকে দেখতে চায় । মৃত্যুহীন মহান প্রণেতাকে কান্তি-কীর্তি-স্মৃতি-মেধা তারা দেখতে চায় সেই মধুমত্তম পুরুষোত্তমাকে, যার দানের তুমি অগাধ ভাণ্ডার, যার তুমি উত্তমকুমার । অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত