"কিরীটি রায়” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
গল্প উপন্যাস পড়ে কৌতুহল কতকটা মেটে—কিন্তু পুরােটা মেটে না। ভেতরে ভেতরে কৌতূহলের অসহ পীড়নে জর্জরিত হবার যে চিরকালীন প্রবৃত্তি মানুষের মধ্যে থাকে, সেই প্রায়-স্যাডিস্ট প্রবৃত্তি মেটাবার প্রয়ােজনেই গােয়েন্দা-কাহিনী রচনার কথা মনে এসেছিল মানুষের।
তবু, যতদিন গল্প উপন্যাসে আখ্যানভাগের ওপরেই বেশি জোর দেওয়া হত—ততদিন গােয়েন্দা-কাহিনী বা অপরাধ-কাহিনীর তত চাহিদা হয়নি। যেদিন থেকে নিরতিশয় ইনটেলেকচুয়াল লেখকেরা সাধারণ গল্পের মধ্যে বকুনি ও তত্ত্বের কচকচানি শুরু করেছেন সেইদিন থেকেই এই সব অপরাধমূলক কাহিনীর চাহিদা বেড়েছে। বিলেতে তাে সৎসাহিত্য বলতে যা সাধারণত বােঝায় সেই পুস্তকের চেয়ে সংখ্যায় অন্তত দশগুণ (হয়তাে আরও বেশি) থ্রিলার বা ক্রাইম নভেলস বেরােচ্ছে। রাশি রাশি, নানা ধরন ও নানা বরণের।
বাংলাদেশের কিশাের সাহিত্যেও গােয়েন্দা কাহিনীর ঝুলি নিয়ে দেখা দিলেন দুই জাত-বৈদ্য—একজন হেমেন্দ্রকুমার রায়, অন্যজন বন্ধুবর ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত। জয়ন্ত-মানিকের এবং পরবর্তীকালে কিরীটী-সুব্রতর আবির্ভাবে বাংলা দেশের কিশাের কিশােরী মহলে যে চাঞ্চল্য জেগেছিল সে বিষয়ে সকলেই অবহিত। | নীহারবাবু প্রখর বুদ্ধিমান ব্যক্তি। ইউরােপের ছায়া যে বাংলাদেশে এসে পড়তে দেরি হবে না এটা তিনি পূর্বাহেই বুঝতে পেরেছিলেন। বুঝেছিলেন যে আমাদের দেশেও যে রকম উন্নাসিক সাহিত্য দেখা দিয়েছে তাতে সাধারণ পাঠক ওই সব আখ্যানহীন গল্প ছেড়ে তাদের চিরন্তন কৌতূহল মেটাবার জন্য চিত্তের নূতন খাদ্য খুঁজবে। তাই তিনি প্রথমত কিরীটী রায়কে কিশােরদের আসরে নামালেও সেখান থেকে সরিয়ে আনতে বিলম্ব করেননি। কিরীটী রায় পরিণতবুদ্ধি পাঠকদের আসরে দেখা দিলেন এবং দেখতে দেখতে আসর জমিয়ে বসলেন।
কিরীটী রায়ের এতগুলাে (২৪টি) ছােট বড় মাঝারি গল্প একসঙ্গে একটি বইতে পাওয়া কিরীটী রায়ের পাঠকদের পক্ষে একটি স্মরণীয় ঘটনা নিঃসন্দেহে।
Read More