জেরি কয়েনের সুপরিচিত, বহুলপঠিত এই বইটি প্রথমত বিবর্তনসংক্রান্ত বিদ্যমান ভুল ধারণাগুলোর প্রতি কিছু যুক্তি উপস্থাপন। এই বইটি স্পষ্টতই একটি বিতর্কের আঙ্গিকে লেখা হয়েছে। ২০০৯ সাল অবধি বিবর্তনের সপক্ষে বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণগুলো তিনি এই বইটিতে জড়ো করেছেন পাঠকদের প্রতি একটি প্রশ্ন উপস্থাপন করার উদ্দেশ্যে – ‘বিবর্তন ছাড়া এই বিষয়গুলো কী ব্যাখ্যা দিতে পারে এর বিকল্প হিসেবে দাবীকৃত সৃষ্টিতত্ত্ববাদ কিংবা এর ছদ্মরূপ ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন মতবাদ?’ শিক্ষকসুলভ সংযত দৃঢ়তায় জেরি কয়েন বইটিতে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তরের সপক্ষে তার যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেছেন। এই প্রমাণগুলোই পাঠককে তার উত্তর খুঁজতে সাহায্য করবে এবং বিবর্তনবিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দিতে আরও কিছু প্রয়োজনীয় যুক্তি এই বইয়ের পাঠকরা তাদের হাতের নাগালেই পাবেন। মনে রাখতে হবে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের ধারণাটির মতো আর কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্বই এতো বেশি প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়নি। এর কারণ সম্ভবত বিবর্তনের ধারণাটি মানুষ হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো উত্থাপন করে: আমরা কীভাবে এলাম - আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যই বা কী? কিন্তু বিবর্তন কোনোভাবেই আমাদের এই বিস্ময়কর অস্তিত্বটিকে অবমূল্যায়ন করেনি, বরং আরও মর্যাদাশীল করে তুলেছে, কারণ পৃথিবীতে আমরা মানুষরাই হচ্ছি একমাত্র প্রজাতি, যারা এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করার মতো বুদ্ধিমত্তা বিবর্তন করতে পেরেছি। ‘হোয়াই ইভোল্যুশন ইজ ট্রু’ বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৯ সালে, আর সেই বছর ১২ ফেব্রুয়ারী ছিল ব্রিটিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী। মানব সভ্যতার ইতিহাসে যুগান্তকারী একটি ধারণার প্রস্তাবক ছিলেন চার্লস ডারউইন (সহ-প্রস্তাবক, কারণ স্বতন্ত্রভাবে একই ধারণায় পৌঁছেছিলেন আরেকজন ব্রিটিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী, আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস)। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের ধারণাটি জীববিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত এবং কেন্দ্রীয় ভিত্তি হওয়া সত্ত্বেও বহু মানুষের কাছে এখনো এটি সন্দেহজনক এবং ‘শুধু একটি তত্ত্ব’ হিসেবে চিহ্নিত। বিজ্ঞানের অন্য কোনো শাখায় মৌলিক কোনো তত্ত্বকেই বিবর্তন তত্ত্বের মত এতো প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়নি। বিশেষ করে যখন এর সত্যতা এর পক্ষে অগণিত প্রমাণ সুস্পষ্টভাবে নিশ্চিত করেছে। বিবর্তন জীববিজ্ঞানী জেরি কয়েন এর কারণ হিসেবে প্রথমত মনে করেন, বিবর্তনের পক্ষে পুঞ্জীভূত প্রমাণগুলো সম্বন্ধে বহু মানুষের অজ্ঞতা। আর সেই অজ্ঞতাকে চ্যালেঞ্জ করে জেরি কয়েন জিনতত্ত্ব, ভ্রূণতত্ত্ব, শারীরস্থান, আণবিক-জীববিজ্ঞান, জীবাশ্মবিদ্যা, বায়োজিওগ্রাফি, ভূতত্ত্ব ইত্যাদি নানা অনুসন্ধানের ক্ষেত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণগুলো উপস্থাপন করছেন এমনভাবে যে, তিনি আশা করেন, এই বইটি পড়লে ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের ধারণাটির সব কিছু ব্যাখ্যা করার অসাধারণ ক্ষমতা সব পাঠককেই বিস্মিত করবে এবং সহজেই ডারউইনবাদের গুরুত্বটি তারা অনুধাবণ করতে পারবেন।