“বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা-৩” বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: মানবসভ্যতার ইতিহাসের ধারায় এই জগতে আমাদের টিকে থাকা, আমাদের সাফল্য, এসব কিছুর পিছনেই আছে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের অবদান। বিজ্ঞানের আলোকিত জয়যাত্রার মাধ্যমেই আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা প্রতিকূলতাকে জয় করতে পেরেছি, উদঘাটন করেছি প্রকৃতির অমোঘ রহস্যকে। বিশ্বমানচিত্রে অবস্থান করে নিতে হলে এই বিজ্ঞানকে জানতে হবে, বুঝতে হবে, এবং জীবনের অংশ হিসাবে গ্রহন করতে হবে। বিজ্ঞানীদের গল্পটা বলা তাই জরুরি। বিজ্ঞানীরা আমাদের মতোই মানুষ -- তাঁরা নিজেদের জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত জয় করে জনকল্যাণে বিজ্ঞানের বড় বড় আবিষ্কার ও উদ্ভাবন করেছেন। এই বিজ্ঞানীদের গল্প আমার সন্তান যায়ান আর যোয়ীকে প্রতিদিন ঘুম পাড়াবার সময়ে শোনাই -- কিন্তু এই গল্পগুলো আরো বহু শিশুর কাছে পৌছে দেয়ার আগ্রহ থেকেই এই সিরিজের বইগুলো লেখা। আগের দুই খণ্ড প্রকাশিত হবার পরে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি আগামী প্রজন্মের কাছ থেকে। তাই এবারে নিয়ে এসেছি আরো ১৫টি গল্প। এই গল্পগুলো আসলে বিশ্বের চেহারা পাল্টে দেয়া সব আবিষ্কার ও তার সাথে জড়িত বিজ্ঞানীদেরই গল্প। এবারের খণ্ডে থাকছে নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেলের সৌভাগ্যময় দুর্ঘটনার মাধ্যমে ডাইনামাইট আবিষ্কারের কাহিনী। আরো থাকছে জীনতত্ত্ব ও বংশগতির জনক গ্রেগর মেন্ডেলের কথা, থাকছে খামখেয়ালি কিন্তু প্রখর মেধাবী গণিতবিদ পল আরডিশের উদ্ভট ও মজাদার গল্প, বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বিড়ালটির কথা, কিংবা রকেটের মাধ্যমে মহাকাশযুগের সূচনাকারী রবার্ট গডার্ডের অধ্যবসায়ের কাহিনী। আর আমাদের নিজেদের দেশের গর্ব ডঃ ফজলুর রহমান খানের সেই অভূতপূর্ব আবিষ্কারের গল্পটাও বলছি। বলেছি নোবেলজয়ী আবদুস সালাম, ভেলক্রোর স্রষ্টা দ্য মেস্ট্রাল ও তার কুকুরের কথা। মহাবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের ছেলেবেলার গল্প, তাঁর পিএইচডি থিসিসের মজার ঘটনা, তাও আছে এখানে। গ্রিক দার্শনিক পিথাগোরাস কিংবা বাঙালি গণিতবিদ রাধানাথ শিকদার, কবুতর পোষা বিজ্ঞানী কাসিমির ফাংক, প্রথম মোটরগাড়ির সড়ক ভ্রমণ, আর অন্ধজনে আলো এনে দেয়া ব্রেইল লিপির ইতিহাস লিখেছি। আর বইটা শেষ করেছি হলিউডের বিশ্বসুন্দরী চিত্রনায়িকা হেডি লামারের যুগান্তকারী উদ্ভাবনের অসাধারণ কাহিনীটা দিয়ে। গতবারের মতো এই বইটি লেখার পেছনেও যায়ান বাবা ও রিনীতা যোয়ী মামণির গল্প শোনার তীব্র নেশা কাজ করেছে, আর সেই সাথে তাদের অসাধারণ মা জারিয়াকেও জানাচ্ছি অনেক কৃতজ্ঞতা -- দুই কৌতুহলী শিশুর দুরন্তপনাকে বিজ্ঞানের দিকে ধাবিত করাতে তাঁর অবদান সবার উপরে। বইটি উৎসর্গ করেছি আমার সব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য। বিজ্ঞানের অপার সুন্দর আলো আসুক সব শিশুর জীবনে, আর বিজ্ঞানের জগতে সবার অভিয়াত্রা হোক শুভ।
রাগিব হাসানের পৈতৃক বাড়ি জামালপুরে, তবে সরকারি কর্মকর্তা ও স্কুলশিক্ষিকা মায়ের এই মেধাবী সন্তানটির জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। পরবর্তীতে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে, এবং সর্বোচ্চ মার্কস নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া প্রতিটি বিভাগে ভালো ফলাফলের কারণে পেয়েছিলেন গোল্ড মেডেলও। বুয়েটে কিছুদিন শিক্ষকতা করে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ে ছুটে গিয়েছিলেন স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে, এবং এখান থেকেই তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তিনি একাধারে শিক্ষক এবং বিজ্ঞানী, তবে তার আগ্রহের মূল বিষয় কম্পিউটার কৌশল। এর তাড়নায় কম্পিউটার নিরাপত্তা ও ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে গবেষণা করছেন সিক্রেটল্যাব নামের একটি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও তিনি উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ চ্যাপ্ট্যারের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বর্তমানে তিনি সপরিবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্মিংহামে বসবাস করছেন, কিন্তু বাংলার সাথে ঠিকই সম্পর্ক বাঁচিয়ে রেখেছেন তার বইগুলোর মাধ্যমে। রাগিব হাসান এর বই মানেই সহজ ভাষায় কঠিন জ্ঞানের কথা। তিনি মূলত লেখেন প্রবন্ধ। রাগিব হাসান এর বই সমূহ এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘বিজ্ঞানীদের কান্ডকারখানা’, ‘গবেষণায় হাতেখড়ি’, ‘মন প্রকৌশল স্বপ্ন অনুপ্রেরণা আর জীবন গড়ার ফরমুলা’, ‘বিদ্যাকৌশল: লেখাপড়ায় সাফল্যের সহজ ফরমুলা’ প্রভৃতি। রাগিব হাসান এর বই সমগ্র এর পাশাপাশি তার ব্লগিংও বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের উপকার করছে। তার নিজের ভাষ্যমতে- শিক্ষকতা তার পেশা ও নেশা। তার শিক্ষা তিনি ছড়িয়ে দিতে চান বিশ্বব্যাপী। তাই অনলাইন শিক্ষাদান ওয়েবসাইট শিক্ষক ডট কম গড়ে তুলেছেন। তার এ উদ্যোগ ২০১৩ সালে গুগলের ‘রাইজ’ পুরস্কার লাভ করে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উচ্চশিক্ষার প্রচলন করতে চান তিনি। এছাড়াও গবেষণাকর্মে পারদর্শিতার জন্য ‘ক্যারিয়ার’ পুরস্কার লাভ করেন ২০১৪ সালে।