১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরের দশকগুলিতে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে, সেই বিশাল ক্যানভাসের কয়েকটি খণ্ডচিত্র এই প্রবন্ধ সংকলনে তুলে ধরা হয়েছে। মূল আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে গ্রামের অর্থব্যবস্থা, সমাজগঠন ও ক্ষমতাবিন্যাস, দুর্নীতির সংষ্কৃতি ও পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি, ভূমি সংস্কার ও ভূমি বেদখলের কলাকৌশল। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতিরোধ সংগ্রামের দৃষ্টান্ত হিসাবে যশোর-খুলনার বিল ডাকাতিয়া, আদিবাসী-অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম, এবং নোয়াখালির চরাঞ্চলে গণআন্দোলনের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বইটির আলোচনায় দেখানো হয়েছে যে নগরায়ণ, শিল্পায়ন, উন্নয়ন কার্যক্রম, এবং দেশবিদেশে শ্রমিকদের অভিবাসন - এসব বহুমুখী প্রক্রিয়ার ফলে গ্রামবাসী মানুষের জীবিকায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একইসাথে শহুরে জীবনযাত্রার রুচি ও প্রবণতা তাদের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়েছে। ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছাড়াও জাতিসত্তা ও ভাষাগত ভিন্নতার ওপর ঝোঁক দিয়ে নবতর সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ঘটেছে। তবে লক্ষণীয় যে, এভাবে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিস্তার ঘটানো হলেও তার আড়ালে শ্রেণিভিত্তিক ক্ষমতাবিন্যাস এবং শোষণের ভূমিকা প্রচ্ছন্নভাবে কাজ করে চলেছে।কিছুটা গল্পের আকারে বলা হলেও এই গ্রন্থের প্রবন্ধগুলো নিতান্ত বর্ণনামূলক নয়। প্রতিটি অধ্যায়েই কোনো সুনির্দিষ্ট সূত্র বা সমস্যাকে তুলে ধরা হয়েছে, এবং রাজনীতি, অর্থনীতি বা সমাজতত্ত্বের যুক্তিবিন্যাস দিয়ে তার বিশ্লেষণ দাঁড় করানো হয়েছে। এর জন্য যেসব তাত্ত্বিক ধারণার প্রয়োজন, সেগুলোও প্রাসঙ্গিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ: ‘জনগণের বিজ্ঞান’, নয়াউদারবাদী বিশ্বায়ন, ধনতান্ত্রিক রূপান্তরের সম্ভাবনা ও অসম্পূর্ণতা, এবং প্রিমিটিভ অ্যাকিউমুলেশন বা আদি ধনার্জনের ধারণাগুলি বাস্তব ঘটনাবলির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যে কৌতূহলী পাঠক বিষয়ের আরও গভীরে প্রবেশ করতে চান তাঁর জন্য প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে তথ্যনির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।