লেখক পরিচিতি পাবলো নেরুদা আসল নাম নেফ্তালি রিকার্দো রেইয়েস বাসোআলতো। জন্ম চিলের পাররাল শহরে, ১২ জুলাই ১৯০৪। শিক্ষাজীবনে আয়ত্ত করেন গ্রিক, লাতিন ও ফরাসি ভাষা; জড়িত হন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে। প্রকাশ করেন একাধিক সাহিত্য সাময়িকী। ১৯২৩-এ প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয়। চিলের বাণিজ্য-দূত হিসেবে ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে কাজ করেছেন। ১৯৪৫ সালে চিলের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হন। কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থনে চিলের রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হন ১৯৭০-এ; পরে প্রতিদ্বন্দ্বী সালবাদোর আয়েন্দের সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। ১৯৭১ সালে লাভ করেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। ১৯৭৩-এর ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অনুবাদক পরিচিতি ভবানীপ্রসাদ দত্ত জন্ম কলকাতায়, ১৯২৯-এ। আদিনিবাস বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের রসুনিয়া গ্রামে। পেশায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক। ছাত্রজীবনেই সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ তৈরি হয়। তাঁর করা পাবলো নেরুদার মেমোয়ার্স-এর বাংলা অনুবাদ অনুস্মৃতি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক সমাদর লাভ করে। নাটক, চলচ্চিত্র ও সংগীতেও রয়েছে তাঁর গভীর আগ্রহ ।
বই পরিচিতি পাবলো নেরুদার এই আত্মজীবনীর সূত্রে আমরা কেবল একটি যুগের বিভিন্ন দেশের বহু বিশিষ্ট ও বরেণ্য কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও রাজনীতিকের নিবিড় সান্নিধ্যে আসারই সুযোগ পাব না, পাব একটি বিশাল কালপর্বের সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্থান-পতনেরও বহু বিচিত্র ঘটনার হার্দিক বিবরণ। এ গ্রন্থে তাঁর স্বদেশের প্রকৃতি, সমাজ ও রাজনীতি যেমন জীবন্ত, তেমনি জীবন্ত তাঁর একান্ত জীবনাচারের বহু বর্ণিল বিবরণ। অনুস্মৃতির পাঠ তাই এক বিরল অভিজ্ঞতা।
পাবলাে নেরুদা বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী লেখক পাবলাে নেরুদা ১৯০৪ সালের ১২ জুলাই লাতিন আমেরিকার সুদূর চিলিতে এক রেল-শ্রমিক ও স্কুল-শিক্ষিকার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৃত নাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসােয়ালতাে। কৈশােরে তিনি পাবলাে নেরুদা’ ছদ্মনামটি গ্রহণ করেন। কারণ ছিল দুটি- এটা সে যুগের জনপ্রিয় রীতি; আর দ্বিতীয়ত, এই নামের আড়ালে কবিতাগুলি নিজের পিতার কাছ থেকে তিনি লুকিয়ে রাখতেন। কবিতা লিখে অল্প বয়সেই খ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু পরে এক বিচিত্র-জটিল ও বর্ণাঢ্য জীবনযাপনে প্রবৃত্ত হয়ে পড়েন। রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে একসময় হয়ে যান বড় রাজনীতিবিদও।। অন্যায় ও হিংসার বিরুদ্ধে, মানুষের সামাজিক ও আত্মিক বন্দিদশার প্রতিবাদে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। স্পেনের গৃহযুদ্ধ শুরু হলে প্রজাতন্ত্রী দেশপ্রেমিকদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন। স্প্যানিস শরণার্থীদের জন্যে লাতিন আমেরিকায় সাহায্য-তহবিল সংগঠিত করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বছরগুলিতে মেক্সিকোর রাস্তায় দেয়ালে-দেয়ালে স্তালিনগ্রাদ-বিষয়ে নিজ কবিতার অনুলিপি সেঁটে বেড়িয়েছেন। সালভাদোর আলিন্দের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন সুনিশ্চিত করার জন্যে তিনি নিজের নামও প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। কবিতায় ইউরােপীয় স্যুররিয়েলিজম, সিম্বলিজম ও বাস্তববাদের বিচিত্র প্রভাবের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন তিনি। লিখেছেন পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইস্তাহার। এমনকি কামােদ্দীপনামূলক কবিতার সংকলন টোয়েন্টি পােয়েমস অফ লাভ অ্যান্ড আ সং অফ ডেসপায়ার-এর মতাে গ্রন্থও লিখেছেন। ১৯৭১ সালে তাঁকে সাহিত্যে নােবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস একদা নেরুদাকে ‘বিংশ শতাব্দীর সকল ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি’ বলে বর্ণনা করেছেন। চে গুয়েভারা ১৭ বছর বয়সে নাকি তাঁর প্রথম প্রেমিকাকে নেরুদার কবিতা শুনিয়েছিলেন। তারপর সারা জীবন ধরে তাঁর লেখা সঙ্গে নিয়ে ঘুরেছেন। ১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।