ফ্ল্যাপে লিখা কথা কলকাতার কাছেই উপকণ্ঠে, পৌষ-ফাগুনের পালা - এই ট্রিলজি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ। কথাসাহিত্যিক গজেন্দ্র কুমার মিত্রের সর্বোত্তম সাহিত্যসৃষ্টি। উনবিংশ শতাবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর শুরু -এই রকম সময়ের পটভূমিতে এই ট্রিলজি কাহিনীর সূত্রপাত। কুলীন ব্রাহ্মণের বিধবা পত্নী রাসমণি ও তার তিনি কন্যার জীবন নিয়ে এই উপন্যাস-ত্রয়ীর কাহিনী শুরু। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মধ্যমা শ্যামাকে কেন্দ্র করে কাহিনী আবর্তিত হয়েছে, তবু রাসমণির তিন কন্যার ক্রমবর্ধমান পরিবারের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার নরনারী বিভিন্ন ঘটনাসূত্রে কাহিনীতে অসাধারণ বৈচিত্রের সৃষ্টি করেছে এবং শেষ পর্যন্ত কাহিনীর অখন্ডতা লাভ করেছে। সংস্কারে সংস্কৃতিতে উন্নত অথবা নিদারুণ দারিদ্রক্লিষ্ট মধ্যবিত্ত সমাজের এই সব মানুষের ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র স্বার্থ-সংকীর্ণতা, আশা-নিরাশা, ছোট বড়, সুখ দুঃখ. বিপদ আপদ সবকিছুর মধ্যদিয়েও তাদের অপরাজেয় জীবনাকোঙ্ক্ষার এবং জীবনযুদ্ধের এক নিটোল অনবদ্য কাহিনী শুনিয়েছেন লেখক যা আমরা আগে শুনিনি, আজকাল শোনা যায় না, অদূর আগামীকালে শুনব কিনা সন্দেহ। বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের ইতিহাসে এই টিলজি নিঃসন্দেহে একটি দিকচিহৃ।
ভূমিকা যারা আমার সাঁঝ সকালের গানের দীপে জ্বালিয়ে দিয়ে আলো, আপন হিয়ার পরশ দিয়ে; এই জীবনের সকল সাদা কালো যাদের আলো-ছায়ার লীলা; সেই যে আমার আপন মানুষগুলি নিজের প্রাণের স্রোতের ‘ পরে আমার প্রাণের ঝরণা নিল তুলি; তাদের সাথে একটি ধারায় মিলিয়ে চলে, সেই তো আমার আয়ু, নাই সে কেবল দিন গণনার পাঁজির পাতায়, নয় সে নিশাস-বায়ু। ................................................... এই ভালো আজ এ সঙ্গমে কান্নাহাসির গঙ্গা-যমুনায় ঢেউ খেয়েছি, ডুব দিয়েছি, ঘট ভরেছি, নিয়েছি বিদায়। -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বাংলাদেশের সাহিত্যের উপাদান বাংলার নর-নারী; তাদের সুঃখ-দারিদ্র্যময় জীবন, তাদের আশা-নিরাশা, হাসি-কান্না-পুলক-বহির্জগতের সঙ্গে তাদের রচিত ক্ষুদ্রজগৎগুলির ঘাত-প্রতিঘাত,বাংলার ঋতুচক্র, বাংলার সকাল সন্ধ্যা-সকাল, আকাশ বাতাস, ফলফুল। বাঁশবনের,আমবাগানের নিভৃত ছায়ায় ঝরা সজনে ফুল বিছানো পথের ধারে যে সব জীবন অখ্যাতির আড়ালে আত্নগোপন করে আছে-তাদের কথাই বলতে হবে, তাদের সে গোপন সুখ-দুঃখকে রূপ দিতে হবে। -বিভূতিভূষণষ বন্দ্যোপাধ্যায়
গজেন্দ্রকুমার মিত্র (জন্ম: ১১ নভেম্বর - মৃত্যু: ১৬ অক্টোবর ১৯৯৪) তার জন্ম ১১ই নভেম্বর কলকাতা শহরে। বাল্যশিক্ষা শুরু হয় কাশীর এংলো-বেঙ্গলী স্কুলে। কলকাতায় ফিরে এসে ঢাকুরিয়া অঞ্চলে গজেন্দ্রকুমার বসবাস শুরু করেন এবং বালিগঞ্জ জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। স্কুল জীবন অতিক্রম করে অতঃপর তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে বই এর ব্যবসায় যোগ দেন ও ১৯৪০ সাল পর্যন্ত্য বই বিক্রি করেছেন গজেন্দ্রকুমার। স্কুল শিক্ষা সমাপ্তির কিছু পরেই বন্ধু সুমথনাথের সঙ্গে মাসিক সাহিত্যিক পত্রিকা 'কথাসাহিত্য' শুরু করেন| ১৯৩৬ সালে তৈরি হয় মিত্র ও ঘোষ প্রকাশনা সংস্থা। গজেন্দ্রকুমারের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস 'মনে ছিল আশা', গল্পগ্রন্থ 'স্ত্রিয়াশ্চরিত্রম' | ১৯৫৯ সালে তাঁর 'কলকাতার কাছেই' উপন্যাস আকাদেমি পুরুস্কারে সম্মানিত হয়| 'কলকাতার কাছেই', 'উপকন্ঠে', 'পৌষ-ফাগুনের পালা'-এই ট্রিলজিকে (ত্রয়ী উপন্যাস) আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য উপন্যাস বলে গণ্য করা হয়| পৌষ-ফাগুনের পালা ১৯৬৪ সালে রবীন্দ্র পুরুস্কার পায়| গজেন্দ্রকুমারের লেখনীর বিচরনক্ষেত্র বিরাট ও ব্যাপক, সামাজিক উপন্যাস, পৌরানিক উপন্যাস, ঐতিহাসিক উপন্যাস, ছোট গল্প.কিশোর সাহিত্য-সর্বত্র তাঁর অবাধ গত| সুদীর্ঘ ষাট বছরের অধিককাল ধরে তাঁর কয়েক হাজার ছোটগল্প ও পঞ্চাশটিরও বেশি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে| তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক, প্রকাশক ও অনুবাদক।