ভূমিকা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষাসমূহের সঙ্গে বঙ্গভাষার নামোল্লেখে এমন কিছু অন্যায় হবে না। শ্রেষ্ঠ ভাষার যে সকল গুন থাকলে ভাষার শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে বাঙলা ভাষার সে সকল গুন অবশ্যই আছে। শব্দের প্রাচুর্য ,বৈয়াকরণ -গঠনাকৃতি, কৌলিক পরিচয়, স্বরুপ-লক্ষণ ও মৌলিক রূপ প্রভৃতি বিভিন্ন গুনাবলি বাঙলা ভাষার শ্রেষ্ঠত্বের কারণ। বর্তমানে আমাদের ভাষায় প্রচীন বাঙলার অমসৃণতা অপসৃত হয়েছে। আধুনিক বাঙলা ভাষার একটি বিশিষ্ট রূপ গড়ে উঠেছে। বাংলা দেশে বহু রাষ্ট্রিক বিপ্লব ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয় এসেছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও বাঙলা ভাষার কালানুক্রমিকত বিবর্তন বাধাপ্রাপ্ত হয় নি। যুগে যুগে বাঙলা ভাষার নবজন্মান্তর হয়েছে।লিপি- লেখেন; প্রত্ন-নির্দশন; রাজন্যবর্গের নান্দীপাঠ প্রভৃতি থেকে প্রমাণিত হয়েছে বাঙলা ভাষার সনাতন ইতিহাস সত্যতা।রোগ শোক,দুর্ভিক্ষ-মহামারির প্লাবন সহ্য করেও বাঙালী তার জীবন বেদ সাহিত্যের সেবা থেকেও কখনও বিরত হয়নি। বাঙ-নির্মিতির দ্বারা বাঙালী যুগে যুগে পালন করেছে তার স্বধর্ম। তাই বাঙলা ভাষারআজ সংস্কৃত-প্রাকৃত-বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে বিশেষ এক আধুনিকতায় রুপান্তরিত হতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের ভাষার এক ধারাবাহিকা ইতিহাস আছে-যা না থাকলে কোন ভাষাই সাধুজনের সমাদর লাভ করতে পারে না। তদুপরি আমাদের ভাষঅর সঙ্গে বহু বিদেশী ও বিভাষী শব্দ সংমিশ্রিত হয়েছে। এই বিস্ময়কর ভাষা-ঐশ্বর্য ভারতের অন্য কোনো ভাষায় দেখা যায় না। বাঙলা শব্দভান্ডার প্রতি যুগে স্ফীত ও পরিস্ফুট হয়েছে। জীবন্থ ভাষার শ্রেষ্ঠতম বৈশিষ্ট্য তার শব্দভান্ডার। বাঙলা শব্দের ও শব্দ -যোজন নিপুন কারুকলা, মাধুর্য ও সংখ্যাধিক্য বাঙলা ভাষার সমৃদ্ধির প্রধান পরিচয়। এত কথা বলার প্রয়োজন , বাঙলা শব্দের সুপ্রচুর বা সমার্থ আছে।কোনো ভাষা শক্তিশালী না হলে , সে ভাষার সমার্থ সৃষ্টি হয় না।আমি এই সঙ্কলনে বাঙলা শব্দের প্রতিশব্দ, সমার্থ বা সমপর্যায়ভুক্ত শব্দসমূহ সঙ্কলন করতে সচেষ্ট হয়েছি। এই ধরনের সঙ্কলন রচনা করা একা কারও দ্বারা সম্ভব নয়। তবুও সমার্থাভিধানের একান্ত অভাব থাকায় আমি একাই এই কাজে ব্রতী হয়েছি। লেখক-লেখিকা,শিক্ষক-শিক্ষত্রয়ী, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আমার এই প্রচেষ্টা যদি সামান্যতম কৃতকার্য হয় তবেই আমার চেষ্টা সার্থক হবে। শ্রদ্ধেয় অভিধান-রচয়িতা ও সুসাহিত্যিক শ্ররাজশেখর বসু সমার্থ বা Synonyms শব্দের প্রসঙ্গে বলেছেন; “সাহিত্য, বিশেষতঃ কাব্যে সমার্থক শব্দ অনেক চলে।“ এই ‘সমার্থক শব্দ’ বলতে বোঝায় -সমান অর্থযুক্ত বা পর্যায়ক শব্দ প্রতিশব্দ সমার্থে বা, তুল্যার্থেই ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে বাঙলা সাহিত্যে বিদেশী রচনার তর্জমা-কার্য সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। কাব্যে ব্যবহার ব্যতীত অনুবাদ-রচনায় সমার্থক শব্দসমূহের বিশেষ প্রয়োজন হয়ে থাকে । এই সংগ্রহে অনুবাদকগনও যথেষ্ট উপকৃত হবেন। এই সঙ্কলন বিশেষত : শিক্ষক-শিক্ষত্রয়ী, লেখক-লেখিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সংগৃহীত হয়েছে।এতদ্ব্যতীত সাধারণ পাঠক-পাঠিকাও এই সঙ্কলন থেকে বাঙলাভাষা -মাধুরী পান করতে পারবেন। ভবিষ্যতে আরও অধিক শব্দ যাতে সংযোজিত হয় তজ্জন্য সচেষ্ট থাকলাম। পাঠক-পাঠিকাদের মধ্যে থেকে যদি কেউ কোনো নূতন শব্দের সন্ধান দিতে পারেন, সাদরে গৃহীত হবে। সংগ্রহকাজে নানা উপদেশ দিয়ে সাহায্য করেছেন ভাষাতাত্ত্বিক ডক্টর সৈয়দ মুজতবা আলী এবং পণ্ডিত শ্রীশ্রীজীব ন্যায়তীর্থ। প্রুফ-দেখার কাজে সাহয্যে করেছেন শ্রীনাথবন্ধু কাব্যতীর্থ এবং শ্রীভবানী মুখোপাধ্যায়কে সর্বশেষ ধন্যবাদ জানাই। শ্রী প্রাণতেষ ঘটক ৮/১ করিশ চার্চ লেন কলিকাতা-৯