আমার কথা... যতটুকু পুড়িয়েছ! / ততটুকুই বুনে দিয়েছি হাহাকার / সাপলুডু খেলা শেষে, / ফিরে আসতেই হবে আবার।| কবিতা সবসময় সুন্দরের বাহক; আবার সত্যোচ্চারণের কণ্ঠস্বর। কিন্ত মানুষকে বাদ দিয়ে কবিতা নয়। যেখানে মানুষ নেই সেখানে কবিতা নেই। মানুষের প্রেম, বিশ্বাস, বিরহ, কাম, সমস্যা, বঞ্চনা, অধিকার, রাজনীতি, রাষ্ট্র-সমাজের ক্ষত ও মেরামত! সবই কবিতার উপজীব্য। অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে কবিতা, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কবিতা, আবার নির্যাতনের বিভৎস চিত্রকল্প কবিতা, রাজবন্দির আর্তনাদ কবিতা, রাষ্ট্রের উন্নয়নের উল্লাস কবিতা, রাষ্ট্রের মর্যাদাহানীর বিরুদ্ধে উচ্চারণও কবিতা। তাই বলেছি প্রতিনিয়ত, ''মিছিল আমার উত্তরাধিকার, স্লোগান আমার উচ্চারণ / ভয় দেখালেই পালিয়ে যাব, এ তোমার ভুল সমীকরণ' প্রেমিক-প্রেমিকার রসবোধ ও খুনসুটি তাও কবিতা। আমি আমার নতুন প্রকাশিত ''পঙক্তিমালার কাঠগড়ায় আগুনফুল' কবিতা বইয়ে সেই সব কথার কাব্যিক উচ্চারণ করেছি। পাঠকের মুখোমুখি হওয়ার প্রয়াস পেয়েছি। পাশাপাশি প্রেম, দ্বন্দ্ব, পাওয়া না পাওয়ার ব্যঞ্জনা এসেছে, হৃদয় বাঁচানো ও সাজানোর প্রয়োজনে। বলেছি, 'মাটির বুকে আঁচড় কাটতে কাটতে বলেছিলে / কলেজের গণ্ডি পেরুলেই দেবে দেহের অধিকার' আবার কোথাও বলেছি, 'চোখ নদী ছলছল / যায় না করা আঘাত / ছুঁলেই হয় কি ছোঁয়া / আমার যে বামন হাত।' প্রেমের করিডোরে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করেছি, ' যে স্পর্শে কেঁপে ওঠে না, সেখানে প্রেম নেই' কিংবা প্রেমকে সান্ত্বনা দিয়েছি এই বলে, ' 'কষ্ট' জীবনের অহংকার / 'যৌবন' সাধনার পুরস্কার'। প্রিয় বাংলাদেশ, / কতদিন মানুষ দেখি না/ দেখি না ভোরের উজ্জ্বল সূর্য্য / খুলতে পারি না গণতন্ত্রের জানালা কতদিন /দেখি না মুক্তিযুদ্ধের রক্তে কেনা স্বাধীনতার প্রাচুর্য।' 'বন্দিশালার চিঠি' একটি আর্তনাদ। এখানে মৃত্তিকার আকুতিতে একটি দীর্ঘশ্বাস কি করে আগুনফুল হয়ে ওঠে তারই গভীর উচ্চারণ। কবিতা সবসময় নতুন উচ্চারণের অপেক্ষায়। আমরা সেই মিছিলে হাঁটছি। পাঠকের কাছে পৌঁছাতে বর্ণমালার নানা আয়োজন চলছে। আমিও সেই আয়োজনের একজন কলম-শ্রমিক। চেষ্টা করেছি সমসাময়িক বিষয়কে কোনো সময়ের ফ্রেমে বন্দি না রেখে সহজবোধ্য ও শৈল্পিক উচ্চারণ, উপস্থাপনের নান্দনিকতা দিয়ে সহজসরল শব্দের মাধুর্যে চিত্রকল্পকে বোধের দরজায় পৌঁছে দিতে। আমার বিশ্বাস 'পঙক্তিমালার কাঠগড়ায় আগুনফুল' কবিতার বইটি ভালো লাগবে। প্রতিবিম্ব প্রকাশনী ও এর কর্ণধার কবি ও কলামিস্ট আবুল খায়ের যথেষ্ট পরিশ্রমী ও মনোযোগী ছিলেন। কবিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পারাঙ্গমতা দেখিয়েছেন। প্রচ্ছদ শিল্পী: আইয়ুব আল আমিন ( প্রচ্ছদ শিল্পীর নাম বসবে) তুলির আঁচড়ে কবিতাগুলোর মূল সুর প্রচ্ছদে প্রতিফলিত করেছেন। আশা করছি পাঠের মধ্য দিয়ে ভাবনার রসদ পাবেন। সবার জন্য শুভ কামনা।
কথাসাহিত্যিক, কবি ও অভিনেতা এবিএম সোহেল রশিদ শিল্প-সংস্কৃতির প্রায় সবক'টি পথেই স্বাচ্ছন্দ্যে পদচারণা করছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের বেদিমূলে আত্মোৎসর্গকৃত সূর্যসন্তান শহিদ বুদ্ধিজীবী এবিএম ত আবদুর রহিম ও মা কারুশিল্পী মিসেস ঝরনা রহীম-এর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনিই বড়। ২৩ ডিসেম্বর ১৯৬৫ খ্রি. রাজধানী ঢাকায় আজিমপুর মেটারনিটি হাসপাতালে ভূমিষ্ঠ হলেও পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এসএসসি সার্টিফিকেট অনুযায়ী তাঁর জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৬৮ খ্রি.। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী, এক পুত্র ও দুই কন্যার সুখি পরিবার। ইতিমধ্যে তাঁর চৌদ্দটি একক কবিতার বই, চারটি উপন্যাস ও একটি শিশুতোষ গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে।